বাঁকুড়ার বাংলা গ্রামের বাসিন্দা সুরজিৎ গোস্বামী। শারীরশিক্ষা বিষয়ে বিপিএড করার পর দু'চোখে ছিল স্কুল শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন।
দু’চোখে স্বপ্ন ছিল স্কুল শিক্ষক হওয়ার। সেই অনুযায়ী নিজেকে তৈরিও করেছিলেন। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগে চলল টালবাহানা। তারপর শুরু হল অদম্য লড়াই। শেষমেশ দীর্ঘ আট বছর পর আদালতের নির্দেশে স্কুল শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতে চলেছেন সুরজিৎ।
বাঁকুড়ার বাংলা গ্রামের বাসিন্দা সুরজিৎ গোস্বামী। শারীরশিক্ষা বিষয়ে বিপিএড করার পর দু’চোখে ছিল স্কুল শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন নিয়ে ২০১১ সালে প্রকাশিত স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার জন্য আবেদন জানান। পরীক্ষা ভাল হওয়ায় সুরজিৎ গোস্বামী ভেবেছিলেন এবার স্বপ্ন পূরণ হবে। কিন্তু না। স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় কমিয়ে দেওয়া দু’নম্বর আদায় করতে সুরজিৎকে আদালতের লড়াই লড়তে হয়েছে দীর্ঘ আট বছর। একের পর এক মামলার শেষে অবশ্য শেষ হাসি হেসেছেন সুরজিৎ। কলকাতা হাইকোর্ট গতকাল রায় দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে দ্রুত নিয়োগ দিতে হবে সুরজিৎকে।
কী ঘটেছিল?
২০১১ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বের হলে আবেদন জানান সুরজিৎ গোস্বামী। আবেদনের ভিত্তিতে ২০১২ সালের পরীক্ষায় বসেন তিনি। ২০১৩ সালে ফলাফল বেরোলে সুরজিৎকে নট কোয়ালিফায়েড ফর পার্সোনালিটি টেস্ট হিসাবে চিহ্নিত করে কমিশন। সুরজিৎ জানতে পারেন তিনি টেট পাস করলেও নিজস্ব বিষয়ে তিনি ৩৯ নম্বর পাওয়ায় তাঁকে নট কোয়ালিফায়েড করা হয়েছে।
শুরু হল লড়াই। সুরজিৎ কমিশনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পরীক্ষার খাতা দেখতে চেয়ে আরটিআই করেন। পরীক্ষার খাতা হাতে পেলে তিনি দেখেন তাঁকে নট কোয়ালিফায়েড করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁকে দু’নম্বর কম দেওয়া হয়েছে।
এরপর ২০১৪ সালে তিনি প্রমাণ সহ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। দীর্ঘ লড়াই শেষে আদালত ২০২১ এর ১৩ ডিসেম্বর কমিশনকে জানায় সুরজিতের প্রাপ্ত নম্বর দু নম্বর বাড়বে। একই সঙ্গে আদালত জানায় ৪২ দিনের মধ্যে সুরজিতের মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে যোগ্যতা বিচার করে তাঁকে নিয়োগ দিতে হবে। আদালতের নির্দেশে ২০২২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কমিশন সুরজিতের মৌখিক পরীক্ষা নিলেও ফলাফল জানাতে গড়িমসি করতে থাকে।
দীর্ঘ সময় পর কমিশন জানায়, সুরজিৎ প্যানেল ভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু তাঁর নিয়োগ নিয়ে গড়িমসি চলতেই থাকে। ফের আদালতের দ্বারস্থ হন সুরজিৎ। এই মামলায় সোমবার আদালত জানিয়ে দেয় দ্রুত সুরজিৎকে শিক্ষক পদে নিয়োগ করতে হবে।
দীর্ঘ আইনের লড়াই শেষে আদালতের এই নির্দেশে খুশির হাওয়া সুরজিতের পরিবারে। সুরজিতের দাবি অন্য কোনও আবেদনকারীকে সুযোগ পাইয়ে দিতেই ইচ্ছাকৃতভাবে পরীক্ষার খাতায় তাঁকে দু নম্বর কম দেওয়া হয়েছিল। আইনি লড়াইয়ে সেই দু’নম্বর তিনি আদায় করতে পেরেছেন। কিন্তু সকলের পক্ষে এই ধৈর্য রাখা সম্ভব নয়। তাই সুরজিতের দাবি রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতি অবিলম্বে বন্ধ হোক। নাহলে প্রকৃত যোগ্য প্রার্থীরা তাঁর মতো বঞ্চিত হতেই থাকবেন।
সুরজিৎ গোস্বামী বলেন, ‘খুব খুশি হয়েছি। আনন্দ লাগছে। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এখানে এসেছি। হাইকোর্টকে ধন্যবাদ জানাই। ২০১১ সাল থেকে আমার লড়াই শুরু। দশ-বারো বছর পর সুবিচার পেলাম।’ তিনি বলেন, ‘লড়াই অনেক কঠীন ছিল। ২০১১ সালে বিজ্ঞাপন বের হয়। ২০১২ সালে পরীক্ষা। ২০১৩ সালে রেজাল্ট বের হয়। ২০১৪ সালে কেস করি। তারপর জানতে পারি দু’নম্বর কম দেওয়া হয়েছে। এই ভাবে দীর্ঘ দশ বছর লড়াইয়ের পর আজকের দিনটা দেখলাম।’
Post A Comment:
0 comments so far,add yours