বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্ষোভের মুখে হুগলির চরখয়রামারি গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান। হুগলি নদীর ভাঙনের মুখে বিপদে পড়ে জিরাটের প্রাথমিক বিদ্যালয়। চড় খয়রামারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তলিয়ে যেতে পারে নদীগর্ভে, এই আশঙ্কা তৈরি হয়। অগাস্ট ২০২১ থেকে স্কুলের খেলার মাঠ, ক্লাব, দুর্গা মণ্ডপ, রাস্তার একাংশ গঙ্গার ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে। সঙ্কটে চলে যায় ৫০ ছাত্রের স্কুলের ভবিষ্যৎ। সংবাদমাধ্যমে খবর দেখে স্কুল বাঁচাতে উদ্যোগ নেয় কলকাতা হাইকোর্ট। স্কুল বাঁচাতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্বতঃপ্রণোদিত উদ্যোগ নেন। স্পেশাল অফিসার নিয়োগ করে আদালত। হুগলি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ চেয়ারম্যান ও স্থানীয় জিরাট গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে অবস্থান জানতে চায় হাইকোর্ট।
গত শনিবার স্কুল পরিদর্শনে যান আদালত নিযুক্ত স্পেশাল অফিসার, দুই আইনজীবী। সেখানে গিয়ে তাঁরা লক্ষ্য করেন একজন ছাত্র বিরল চর্মরোগে আক্রান্ত। প্রধান শিক্ষক বলেন, "এটা পুরানো অসুখ, কিছু হবে না। ছাত্রের বাবা একজন কৃষক।" সহপাঠীরা পর্যন্ত আইনজীবীদের বলেন যে ওই ছাত্রকে স্পর্শ না করতে। এতে ছাত্রটির মনে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছে আদালত। স্পেশাল অফিসার আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত ও বিক্রম বন্দোপাধ্যায় রিপোর্ট দিয়ে জানান আদালতে।
আদালতে জীরাট গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানকে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, "আক্রান্ত ছাত্রটির মা লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা পান?" পঞ্চায়েত প্রধান সুচন্দ্রা রায় উত্তর দেন তিনি এই বিষয়টি জানেন না।ক্ষিপ্ত আদালত তারপরেই তীব্র ভর্ৎসনা করেন তাঁকে, বলে, "আপনারা থাকেন কী করতে গ্রামে ? এটাও জানেন না। শুধু ভোটের আগেই যান? তা হলে লক্ষ্মীর ভান্ডার আছে কী করতে ? কিসের এত প্রচার? কিসের এত ঢক্কানিনাদ ? আপনি কোন দলের আমি জানি না । কিন্তু আপনাদের মতো ব্যক্তিদের জন্যই সমাজকল্যাণ মূলক প্রকল্প ব্যর্থ হয় । আপনারা শুধু ভোটের আগেই যান। ভোটের আগে একবার দয়া করে যাবেন, আর আদালতে এসে জানাবেন।" এর পরে বিচারপতি ফের প্রশ্ন করেন, "আপনার গ্রাম পঞ্চায়েতের লোকসংখ্যা কত ?" প্রধান উত্তর দেন, "৩০ - ৩৫ হাজার।"
আদালত পাল্টা বলে, "পঞ্চায়েত সচিব ও আপনারা অনেক তথ্য গোপন করার চেষ্টা করেছেন। আদালত মনে করলে আপনারা কোন তথ্য গোপন করতে পারবেন না। স্কুলের মাঠ, রাস্তা নদীগর্ভে চলে গেছে এটা জানাননি কেন?" হুগলি ডিপিএসসি আইনজীবী বিশ্বব্রত বসু মল্লিক জানান, স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ, ছাত্রটির চিকিৎসার সব ব্যবস্থা করবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান। স্কুল স্থানান্তরের খরচের হিসাব পরবর্তী শুনানির দিন পেশ করতে হবে। সাময়িকভাবে স্কুলটি অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান হয়েছে। আগামীকাল সকাল ৭টায় সেই স্কুল পরিদর্শন করবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যানের প্রতিনিধিরা। আশেপাশের ঝোপ ঝাড় এবং জঙ্গল পরিষ্কার করার নির্দেশও তিনি দেন পঞ্চায়েতকে। ২৩ আগস্ট পরবর্তী শুনানি। আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানকে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours