সোমবার (১৮ জুলাই), সপ্তাহের শুরুর দিনে ফের রেকর্ড নিম্নে টাকার দাম। কেন এভাবে পড়ছে টাকার দাম? সোমবার সংসদে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন কী বললেন?
সোমবার (১৮ জুলাই), সপ্তাহের শুরুর দিনে ফের পড়ল টাকার দাম। অথচ, এদিন দিনের শুরুতে বাজার খোলার পর হু-হু করে দাম বাড়ছিল ভারতীয় মুদ্রার। কিন্তু, তারপরই ঝপ নেমে ভেঙে দিয়েছে সর্বকালের রেকর্ড। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী এদিন নতুন ইন্ট্রা-ডে ট্রেডে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার দাম ছিল ৭৯.৯৮২৫। আর পিটিআই-এর প্রতিবেদন বলছে, এদিন বাজার বন্ধের সময় ডলার প্রতি ভারতীয় মুদ্রার দাম ছিল ৭৯.৯৭ টাকা। কিন্তু কেন এভাবে পড়ছে টাকার দাম? সোমবার সংসদে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন, অপরিশোধিত তেলের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি, বিশ্বব্যপী আর্থির মন্দা, বিদেশি বিনিয়োগের অভাবের মতো বিভিন্ন বৈশ্বিক কারণগুলিকেই দায়ী করেছেন।

এদিন লোকসভায় এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কাছে একটি লিখিত প্রশ্ন রাখা হয়েছিল। জবাবি ভাষণে তিনি বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব, অপরিশোধিত তেলের দামের ঊর্ধ্বগতি এবং বৈশ্বিক কঠোর আর্থিক অবস্থার মতো বৈশ্বিক কারণগুলিই মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার দুর্বলতার প্রধান কারণ। তবে, ভারতীয় টাকার থেকেও ব্রিটিশ পাউন্ড, জাপানি ইয়েন এবং ইউরোর মতো মুদ্রাগুলি মার্কিন ডলারের তুলনায় তুলনায় বেশি দুর্বল হয়েছে। তাই, ২০২২ সালে এই মুদ্রাগুলির বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রা আরও শক্তিশালী হয়েছে।

নির্মলা সীতারমন আরও দাবি করেছেন, ভারতীয় মুদ্রার এই অবমূল্যায়ন আসলে রপ্তানি প্রতিযোগিতায় ভারতের সাফল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনার নির্দেশক। তবে তিনি মেনে নিয়েছেন, এর ফলে আমদানি আরও ব্যয়বহুল হয়ে তুলবে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী আরও বলেছেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া নিয়মিত বৈদেশিক মুদ্রার বাজার পর্যবেক্ষণ করে। বাজারে অতিরিক্ত অস্থিরতা দেখা দিলে তারা হস্তক্ষেপ করে থাকে। সাম্প্রতিক কয়েক মাসে ভারত সুদের হার বাড়িয়েছে। যা ভারতের বাসিন্দা এবং অনাবাসীদের মধ্যে ভারতীয় মুদ্রা রাখার আকর্ষণ বাড়িয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) মার্কিন ডলার প্রতি ৮০ টাকার গণ্ডি প্রায় পার করে ফেলেছিল ভারতীয় মুদ্রার দাম। রেকর্ড সর্বনিম্ন ১ ডলার = ৭৯.৯৯ টাকায় নেমে গিয়েছিল। পরের দিন, শুক্রবার সেখান থেকে কিছুটা ভারতীয়মুদ্রার মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছিল, ১৭ পয়সা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১ ডলার = ৭৯.৮২ টাকায়। সেখান থেকে এদিন বাজার বন্ধের সময় আবার ভারতীয় মুদ্রার দাম নেমে গেল ডলার প্রতি ৭৯.৯৭ টাকায়।

অর্থনীতিবিদদের মতে, ভারতীয় মুদ্রার সবথেকে বেশি ক্ষতি করছে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সরে যাওয়া। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের কঠোর আর্থিক নীতির ফলে, সেই দেশে মন্দা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেও টেকসইভাবে ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে ডলার। আর এই কারণে সারা বিশ্বেই এখন বিনিয়োগকারীদের মধ্য়ে ডলার-নির্দেশিত সম্পদে বিনিয়োগের ঝোঁক দেখা যাচ্ছে। ভারতীয় স্টক এবং অন্যান্য সম্পদ থেকেও লাগাতার বিদেশি বিনিয়োগ সরছে, যাচ্ছে ডলারের ঘরে।

জুলাই মাসে এখনও পর্যন্ত ৭,৪০০ কোটির বেশি টাকার বিদেশী বিনিয়োগ হারিয়েছে ভারতীয় ইক্যুইটি বাজার। জুন মাসে ৫০,২০৩ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২.২৫ লক্ষ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ সরেছে ভারতীয় ইক্যুইটি বাজার থেকে। যা একটি সর্বকালীন রেকর্ড। এর আগে, আগের রেকর্ড ছিল ২০০৮ সালে। পুরো বছরে বিদেশি বিনিয়োগ সরেছিল ৫২,৯৮৭ কোটি টাকা।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours