স্বাস্থ্য ভাল যাচ্ছে নাকি খারাপ তার সম্পর্কে আমাদের পেট অনেক আগেই সংকেত দিতে শুরু করে। এই ধরনের সংকেতগুলির মধ্যে কিছু সংকেত কোলন ক্যান্সারের জন্যও থাকে। কোন ধরনের সংকেত?
অন্যান্য অসুখের তুলনায় কোলন ক্যান্সার (Colon Cancer) অনেক বেশি বিপজ্জনক (Deadly Disease)। পরিসংখ্যান অনুসারে, সমগ্র বিশ্বে সব লিঙ্গের মানুষের মধ্যে ক্যান্সারের কারণে হওয়া মৃত্যুর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণটি হল কোলন ক্যান্সার। দি কোলোরেক্টাল ক্যান্সার অ্যালায়েন্স-এর মতে ২০২২ সালে কোলন ক্যান্সারের কারণে প্রায় ৫২, ৫৮০ জন ব্যক্তির প্রাণ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। আরও ভয়ের ব্যাপার হল, প্রথম দিকে এই অসুখের কোনও লক্ষণ (easy to miss) সেভাবে বোঝা যায় না। ফলে রোগাক্রান্তও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন না। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একেবারেই যে লক্ষণ (Symptom of Colon Cancer) প্রকাশ পায় না এমন নয়। তবে উপসর্গ এতই মৃদু থাকে যে প্রায় প্রত্যেক রোগীই তা এড়িয়ে যান। তবে তাঁরা সতর্ক করছেন লক্ষণগুলিকে (warning signals) এড়িয়ে যাওয়া চলবে না। অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ ওই নির্দিষ্ট লক্ষণগুলিই হল কোলন ক্যান্সারের রেড ফ্ল্যাগ!
পলিপস (Polyps)!
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অনেকসময় কোলন ক্যান্সার এবং রেকটাল ক্যান্সার একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে থাকে। কারণ এই দুই ক্যান্সারের বৈশিষ্ট্য প্রায় সমান। কারণ হিসেবে তাঁরা জানাচ্ছেন, কোলোরেক্টাল ক্যান্সার শুরু হয় একধরনের বৃদ্ধি বা গ্রোথ দিয়ে। এই বৃদ্ধিকে বলে পলিপ। সাধারণত রেকটাম এবং কোলনের ভিতরের গাত্রে এই ধরনের পলিপ তৈরি হয়।
না, সব পলিপই যে ক্যান্সারযুক্ত তা নয়। তবে হ্যাঁ, এই ধরনের পলিপ প্রকৃতিতে অ্যাডিনোমাস। অর্থাৎ ক্যান্সার হওয়ার আগের পর্যায়ে থাকে এই ধরনের পলিপ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যা ক্যান্সারে পরিণত হয়। এমনকী পলিপ হাইপারপ্লাস্টিক (কোষের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটাতে পারে এমন) এবং প্রদাহজনক হতে পারে তবে সবসময় তা ক্যান্সারে রূপান্তরিত হবে এমন নয়। অবশ্য সেসিল পলিপস এবং ট্রাডিশনাল সারিটেড অ্যাডিনোমাস পলিপের চিকিৎসা দ্রুত করার দরকার, কারণ এই ধরনের পলিপকে ক্যান্সারের ঝুঁকি হিসেবেই দেখা হয়।
কোন বয়সে বেশি দেখা যায়?
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তবে আজকাল কমবয়সিদের মধ্যেই এই রোগের আশঙ্কা বাড়ছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, ১৯৯০ সালের পর থেকে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে কোলোরেক্টাল ক্যান্সার হওয়ার সংখ্যা (কোলন এবং রেকটামের ক্যান্সার মিলিতভাবে) বেড়েই চলেছে। এমনকী ৫০ বছরের বয়সের কম বয়সি লোকেরও কোলোরেক্টাল ক্যান্সার হতে দেখা যাচ্ছে। অদ্ভুতভাবে বয়স্কদের মধ্যে বরং কোলন ক্যান্সারজনিত প্রাণহানির সংখা কমছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নিয়মিত কোলনোস্কোপি করানো এবং ধূমপান ত্যাগ করার প্রবণতাই এই ঘটনার পিছনে দায়ী।
কোলনোস্কোপিতে রোগ ধরা পড়ে যাওয়ার কারণেই ক্যান্সারের আগাম চিকিৎসা শুরু করা যাচ্ছে ও প্রাণে বাঁচছেন রোগী। অতএব প্রাণহানি রোধে রোগের প্রাথমিক লক্ষণ চেনা অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়।
বয়স যাই হোক না কেন, কোলন ক্যান্সারের বিশেষ বিশেষ লক্ষণগুলি শরীরে দেখা দিলেই সতর্ক হন। বিশেষ করে ৪৫ বছরে পা দেওয়া মাত্রই নিয়মিত কোলনোস্কোপি করানো দরকার। এছাড়া রোগনির্ণয়ে স্টুল টেস্টও জরুরি। আবার বংশে কোলন ক্যান্সার হওয়ার ইতিহাস থাকলে ৪৫ বছরের কম বয়স থেকেই স্ক্রিনিং করান।
কোন লক্ষণ এড়াবেন না?
স্বাস্থ্য ভাল যাচ্ছে নাকি খারাপ তার সম্পর্কে আমাদের পেট অনেক আগেই সংকেত দিতে শুরু করে। এই ধরনের সংকেতগুলির মধ্যে কিছু সংকেত কোলন ক্যান্সারের জন্যও থাকে। কোন ধরনের সংকেত?
বমি বমি ভাব, রেকটাল ব্লিডিং, বদহজম এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যথা হল কোলন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ। এমনকী কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়ারিয়ার সমস্যাও কোলন ক্যান্সারের ইঙ্গিত হতে পারে। তবে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়ারিয়া এতটাই পরিচিত সমস্যা যে প্রায় সকলেই উপসর্গগুলিকে পাত্তা দেন না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুষ্টি উপাদান সংগ্রহের জন্য কোলন প্রচুর জল শোষণ করে। এর ফলে অপাচ্য এবং তরল খাদ্যবস্তু কঠিন মলে পরিণত হয়। ফলে কোলনে কোনও সমস্যা তৈরি হলে কোলন জল শোষণ করতে পারবে না। তাই বারংবার ডায়ারিয়ার সমস্যা দেখা দেবে।
আবার কনস্টিপেশনও হতে পারে। কারণ কী? বিশেষজ্ঞরা বিশ্লেষণ করেছেন— কোলন হল শরীর থেকে মল নিষ্কাশনের অন্যতম রাস্তা। তবে এই পথে ক্যান্সারযুক্ত কোষের বৃদ্ধি হলে মল বেরতে পারবে না। আটকে যাবে। এমন ক্ষেত্রে রোগীর কনস্টিপেশনের সমস্যা দেখা দেবে।
কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের অন্যান্য লক্ষণ
প্রশ্ন হল কোন ধরনের লক্ষণ দেখলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত? বিশেষজ্ঞের উত্তর— আগে কখনও এমন সমস্যা দেখা না গেলে, একটানা বারবার উপরিউক্ত উপসর্গগুলি দেখা দিলে, সাধারণ চিকিৎসায় উপসর্গের উপশম না হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সেক্ষেত্রে চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা করেই বুঝতে পারবেন ওই রোগীর দেহে কোলন ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে কি না।
রোগ প্রতিরোধ
খাদ্যে প্রোটিন (মাংস) ও ফ্যাটজাতীয় খাদ্যের (ঘি, মাখন, তেল, ভাজাভুজি, ময়দা) মাত্রা বেশি থাকা, প্রদাহজনক অন্যান্য অসুখ থাকা, শরীরচর্চায় অনীহা এই রোগের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। রোগ প্রতিরোধে তাই ফাইবার যুক্ত খাদ্য (শাকসব্জি, ফল) বেশি করে খেতে হবে। এছাড়া নিয়মিত ৪০ মিনিট এক্সারসাইজ করতে হবে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours