আপাদমস্তক ভৌগলিক বিষয়ক একটি শব্দ কেন রাজনীতির আঙিনায় এত প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল? তা বুঝতে গেলে জানতে হবে হিমশৈল আসলে কী?
হিমশৈলের চূড়া! এই শব্দবন্ধ শুক্রবার রাত থেকেই ঘুরে ফিরেছে এসেছে রাজনৈতিক নেতা, নেত্রীদের মুখে। ‘পার্থ ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে শুক্রবার ২১ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সেই ছবি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই সরগরম রাজ্য রাজনীতি। এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে এর পর থেকেই বিরোধীদের আক্রমণের কেন্দ্রে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। তৃণমূলের বিভিন্ন নেতার দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকার অভিযোগ জোরাল হয়েছে ইডি-র টাকা উদ্ধারের ঘটনায়। ২১ কোটি টাকা উদ্ধার দুর্নীতির খুব সামান্য অংশ বলেই মনে করছেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ এ রকম বহু বেআইনি লেনদেন সামনে আসা বাকি আছে। হেভিওয়েটদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত যত এগোবে, তত দুর্নীতির শিকড়ের গভীরতা বোঝা যাবে বলে দাবি বিজেপি, কংগ্রেস, বামেদের। সেই বিষয়টি বোঝাতেই বামনেতা থেকে বিজেপির একাধিক নেতার মুখে শোনা গিয়েছে হিমশৈলের চূড়া।
কিন্তু আপাদমস্তক ভৌগলিক বিষয়ক একটি শব্দ কেন রাজনীতির আঙিনায় এত প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল? তা বুঝতে গেলে জানতে হবে হিমশৈল আসলে কী?
হিমবাহের বিশালাকার বরফের অংশ ভেঙে সমুদ্রের জলে এসে পড়ে। এবং সমুদ্রের জলেই তা ভাসতে থাকে। সমুদ্রে ভাসমান এবং গতিশীল বিশালাকার বরফের স্তূপকে হিমশৈল বলে। সাধারণত মহাদেশীয় হিমবাহ থেকে বিশাল বরফের স্তূপ আলাদা হয়ে সংলগ্ন সমুদ্রে হিমশৈলরূপে ভেসে বেড়ায়। এই হিমশৈলের যত টুকু অংশ জলের উপর দেখা যায় তার থেকে বেশি অংশ থাকে জলের নীচে। হিমশৈল সাধারণত মিষ্টিজলে তৈরি হয়। এই হিমশৈলের ৯ ভাগের ১ ভাগ অংশ জলের উপরে ভেসে থাকে এবং ৯ ভাগের ৮ ভাগ অংশ জলে ডুবে থাকে। বিশালকার হিমবাহ অনেক ক্ষেত্রেই সমুদ্রে জাহাজ চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে। ১৯১২ সালে সাউদাম্পটন থেকে নিউ ইয়র্ক যাচ্ছিল টাইটানিক জাহাজ। সে সময়ই উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে একটি বিশালাকার হিমশৈলের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। যার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সে সময়ের বিলাশবহুল ওই জাহাজ। মহাসাগরের গভীরে ডুবে গিয়েছিল সেটি। আন্টার্কটিকা ও গ্রিনল্যান্ড হল হিমশৈলের অন্যতম প্রধান উৎস।
সমুদ্রের উপরে যতটা দেখা যায়, তার অধিকাংশ অংশই দেখা যায় না। হিমশৈলের এই বৈশিষ্ট্য বোঝাতেই হিমশৈলের চূড়া শব্দবন্ধ ব্যবহার করছেন রাজনীতিকরা। এই শব্দবন্ধের মাধ্যমে তাঁরা বোঝাতে চাইছেন, দুর্নীতির যতটা এখনও ধরা পড়েছে। তার থেকে অনেক বেশি উন্মোচিত হয়নি। সে জন্যই এই উপমা।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours