বানর বাহিনীর ভয়ে কাঁপছে জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমের ইয়ামাগুচি শহরের বাসিন্দারা। শহরের বাসিন্দা, বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্ক মানুষদের নিশানা করছে তারা।
টোকিয়ো: বানর বাহিনীর ভয়ে কাঁপছে জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমের ইয়ামাগুচি শহরের বাসিন্দারা। শহরের বাসিন্দা, বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্ক মানুষদের নিশানা করছে তারা। কামড়ে মাংস ছিঁড়ে নিচ্ছে, নখের আঁচরে করে দিচ্ছে ক্ষতবিক্ষত, ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কোলের শিশুদের, শিশুদের ছিনতাই করতে এমনকি নার্সারি স্কুলে লুকিয়ে থাকছে তারা। গত ৮ জুলাই থেকে অন্তত শহরের ৫৮ জন শিশু ও বয়স্ক বানরের হামলার শিকার হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। এরপরই বানরসেনাকে প্রতিহত করতে শহরের পুলিশ বাহিনী এক বিশেষ ইউনিট তৈরি করতে বাধ্য হয়েছে। এই নয়া ইউনিটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুষ্ট বানরগুলিকে গুম পাড়ানি গুলি মেরে তাদের আটক করার। তবে, বানররা হঠাৎ কেন এইভাবে খেপে গেল, তা এখনও কেউ বুঝতে পারছেন না।
ইয়ামাগুচি শহর বেশি পরিচিত উষ্ণ প্রস্রবণের জন্য। এই উষ্ণ প্রস্রবণগুলিতে স্নানের উদ্দেশ্যে বহু পর্যটকই ভিড় জমান এই জাপানি শহরে। কিন্তু, বর্তমানে শহরে পর্যটকের ভিড় তো নেইই, বরং তীব্র আতঙ্কে রয়েছেন শহরের বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, বারান্দায় জামা কাপড় মেলতে গেলে, কিংবা পায়ে মোজা পরার সময়ই বেশি মাত্রায় হামলা চালাচ্ছে বানররা। স্থানীয় বাসিন্দাদের আরও দাবি, হামলাকারী বানরগুলি আকারে অস্বাভাবিক রকমের ‘বড় এবং মোটা’। যা দেখে বিস্মিত হয়ে গিয়েছেন তাঁরা। গত মঙ্গলবার একটি পুরুষ বানরকে ধরা গিয়েছে। সেটির উচ্চতা ৪৯ সেন্টিমিটার বা ১.৬ ফুট। ওজন ১৫ পাউন্ড বা ৭ কিলোগ্রাম।
শহরের এক পদস্থ পুলিশ কর্তার দাবি, “তারা (বানর বাহিনী) অত্যন্ত স্মার্ট। লুকিয়ে লুকিয়ে পিছন থেকে এসে তারা আক্রমণ করে। প্রায়শই পিছন থেকে চুপিসারে এসে মানুষের পা ধরে উল্টে দিচ্ছে। তারপরই শুরু হচ্ছে আঁচড়-কামড়।” সূত্রের খবর, একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিয়ো ক্লিপে দেখা গিয়েছে, একটি বানর প্রথমে একটি বাড়ির জানালা দিয়ে উঁকি দিচ্ছে। তারপর প্রায় পা টিপে টিপে সেই বাড়িতে ঢুকছে। আরও আশ্চর্যজনক হল, এই বানররা খাদ্যের বিষয়ে আগ্রহী নয়। এমনটা নয় যে তারা খাবার না পেয়ে শহরে হানা দিচ্ছে। প্রথম দিকে বানরগুলিকে ধরার জন্য খাবার দিয়ে ফাঁদ পেতেছিল পুলিশ। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
এই অবস্থায় ইয়ামাগুচির স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনওভাবেই সরাসরি বানরগুলির চোখের দিকে না তাকানোর উপদেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, আচমকা বানরদের সামনে পড়ে গেলে নিজেদের শরীরের আকার যতটা সম্ভব বড় করে দেখাতে হবে। এক জন্য গায়ে থাকা কোট ফুলিয়ে ধরা যেতে পারে। তারপর, তাড়াহুড়ো না করে ধীরে ধীরে পিছনে সরে যেতে হবে। আক্রান্তদের অবিলম্বে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জাপান মূলত শহুরে এবং শিল্পোন্নত দেশ হলেও, এই দ্বীপরাষ্ট্রের একটা বড় অংশে রয়েছে পাহাড় এবং বনাঞ্চল। এর আগে, খুব বিরল হলেও, জাপানে ভাল্লুক, বুনো শুয়োর এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণীর হামলার খবর পাওয়া গিয়েছে। তবে, এর আগে কখনও বানরের হামলার খবর পাওযা যায়নি। সেই কারণেই এই ঘটনা আরও বিস্ময় জাগিয়েছে। এই হামলাকারী বানর বাহিনী ঠিক কোথা থেকে আসছে, তাও এখনও স্পষ্ট নয়। এর মধ্যে একটি বানর ওই হামলাকারী দলের সদস্য হিসেবে শনাক্ত করার পর তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তবে ওই ঘটনার পর হামলার সংখ্যা আরও বেড়েছে বলে দাবি করেছে প্রশাসন।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours