এসএসসি দুর্নীতিতে বেআইনি আর্থিক লেনদেনের যে অভিযোগ উঠেছিল, তার তদন্ত শুরু করে ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট)। সেই মামলাতেই শুক্রবার দীর্ঘক্ষণ জেরা করা হয় রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিবকে।
এসএসসি গ্রুপ-ডি এবং নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক দুর্নীতি মামলার শুনানি হাইকোর্টে চলাকালীন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করার আর্জি জানায় সিবিআই। সেই আর্জি মেনে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী (বর্তমানে শিল্পমন্ত্রী) পার্থকে সিবিআই দফতরে হাজিরার নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ১২ এপ্রিল হাজিরা দিতে বলা হয় তাঁকে। প্রয়োজনে রাজ্যের হেভিওয়েট মন্ত্রীকে গ্রেফতার করাতেও ছাড়পত্র দিয়েছিল আদালত। এর পর নাটকীয় ভাবে এগিয়েছে ঘটনাক্রম। হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে রক্ষাকবচ চেয়ে মন্ত্রীর আবেদন করেছিলেন। সাময়িক রক্ষাকবচও পেয়েছিলেন। কিন্তু শেষমেশ সিবিআই দফতরে হাজিরা দিতে হয়েছিল পার্থকে। এসএসসি দুর্নীতিতে বেআইনি আর্থিক লেনদেনের যে অভিযোগ উঠেছিল, তার তদন্ত শুরু করে ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট)। সেই মামলাতেই শুক্রবার দীর্ঘক্ষণ জেরা করা হয় রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিবকে। এর পর শনিবার তাঁকে গ্রেফতার করেছে ইডি। ব্যাঙ্কশাল আদালতেও তোলা হয়েছে তাঁকে। আসুন এক নজরে দেখে নিই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাদের তদন্তের জালে কী ভাবে জড়ালেন রাজ্যের হেভিওয়েট মন্ত্রী।
১২ এপ্রিল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যাকে সিবিআই দফতরে হাজিরার নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। হাজিরা এড়াতে মন্ত্রী এসএসকেএম-এর উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হতে পারবেন না বলেও জানিয়েছিলেন বিচারপতি।
এই নির্দেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেন পার্থ। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একক বেঞ্চের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেন বিচারপতি আনন্দকুমার মুখোপাধ্যায় এবং সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ। ডিভিশন বেঞ্চের দেওয়া পাঁচ সপ্তাহের স্থগিতাদেশে সাময়িক স্বস্তি পান রাজ্যের মন্ত্রী।
পাঁচ সপ্তাহের স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষে ফের পার্থকে সিবিআই দফতরে হাজিরা দিতে বলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এই নির্দেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চেয়ে ফের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেন পার্থর আইনজীবীরা। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় সিবিআইয়ের সামনে হাজিরা এড়ানোর কোনও উপায় ছিল না পার্থর সামনে।
১৮ মে সিবিআই দফতর নিজাম প্যালেসে হাজিরা দেন পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়। সে দিন প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা সিবিআই দফতরে ছিলেন তিনি। হাজিরা শেষে বেরনোর পর অবশ্য সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি তিনি।
২০ মে ফের পার্থকে তলব করে সিবিআই।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে বেআইনে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছিল আগেই। দেশে বিভিন্ন আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এই মামলাতেও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে নামে ইডি। নিয়োগের জন্য কে, কাকে কী ভাবে টাকা দিয়েছে? কার কার কাছে সেই টাকা গিয়েছে? মূলত এ সবেরই তদন্ত করছে ইডি।
সেই তদন্তের জন্য ২২ জুলাই সাত সকালেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে যান ইডি আধিকারিকরা। পার্থের বাড়ি ছাড়াও রাজ্যের আরও ১৩টি জায়গায় শুক্রবার তল্লাশি চালিয়েছে ইডি।
শুক্রবারই অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে ২০ কোটি ২১ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। বিভিন্ন সূত্রের দাবি, এই অর্পিতা মুখোপাধ্যায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ। ২জনের এক সঙ্গে উপস্থিত থাকার বিভিন্ন ছবিও শুক্রবার রাত থেকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
প্রায় ২৭ ঘণ্টা জেরার পর শনিবার সকালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে ইডি। জোকার ইএসআই হাসপাতালে তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়। এর পর বিকাল ৩টে নাগাদ ব্যাঙ্কশাল কোর্টেও হাজির করানো হয়েছিল রাজ্যের মন্ত্রীকে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours