ফোন আসছে… ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলো গুজব: জাভেদ শামিম
Apr 14 2025 - kakdwip.comএখানে কি ক্ষমতা জাহির করতে প্রতিবাদ? করতে হলে দিল্লি যান’, নওশাদের ওয়াকফ প্রতিবাদ নিয়ে খোঁচা তৃণমূলের
Apr 14 2025 - kakdwip.comআরও ‘ঝাঁঝ’ বাড়াচ্ছেন চাকরিহারারা, এবার নিলেন বিরাট সিদ্ধান্ত
Apr 14 2025 - kakdwip.comনির্বাচন কমিশনকে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে ভোট করানোর দাবি তুললেন শুভেন্দু
Apr 14 2025 - kakdwip.comএবার ভাঙড়! রাস্তার উপরই আগুন লাগিয়ে দেওয়া হল পুলিশের বাইকে, পরপর ভাঙচুর গাড়ি
Apr 14 2025 - kakdwip.com
এ বছরের ফরাসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ে ২২% ভোট পেলেন বর্ষীয়ান অতি-বাম রাজনীতিক জাঁ-লিক মেলশঁ। ১৯৬৯-এর জাক দুক্লো ২১.৩% ভোট পাওয়ার পর অতি-বামের এতটা রমরমা দেখেনি ফ্রান্স। ভেবে দেখলে, এ হয়তো একটা সামাজিক প্রতিরোধই। কয়েক বছর ধরেই অতি-দক্ষিণপন্থার দুর্বার অগ্রগতি দেখছে ফ্রান্স।
সত্যি বলতে কী, ২০২২-এর ফরাসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কোনও নির্বাচন গোটা পৃথিবীতেই হয়নি সাম্প্রতিক অতীতে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরাজয় বা ব্রেক্সিটের চাইতেও প্রবলতর হতে চলেছে এর অভিঘাত। ফলাফল যা-ই হোক না কেন, তার প্রভাবটা হবে সুবিশাল। এর প্রধান কারণ অবশ্যই আজকের ফ্রান্স তথা ইউরোপের অভিবাসী-অধ্যুষিত চরিত্র, যা বিপন্ন করে তুলেছে সামাজিক ভারসাম্যকে।
ফরাসি দেশে অতি দক্ষিণপন্থার এই সাম্প্রতিক শ্রীবৃদ্ধির অনেকটাই অবশ্য উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের শতাব্দী-লালিত উপনিবেশের উত্তরাধিকারে সম্পৃক্ত। দেশ জুড়ে আজ আফ্রিকান অভিবাসীর বন্যা। ফরাসি ফুটবলে জ়িনেদিন জ়িদান, থিয়েরঁ অঁরি, কিলিয়ান এমবাপের মতো মহাতারকার আবির্ভাব মুদ্রার এক পিঠ মাত্র। অন্য পিঠে ক্রমেই বদলে যাচ্ছে দেশটার জনবিন্যাস, ধর্মীয় চরিত্র, শ্বেতাঙ্গ বৈশিষ্ট্য, খাদ্যাভ্যাস, কথ্য ভাষা, সংস্কৃতির প্রতিটা স্তর, সামাজিক পরিমণ্ডল, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে অতি দক্ষিণপন্থী ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেত্রী মেরিন ল্য পেঁ-র বক্তব্য, ফ্রান্স ফরাসিদেরই জন্য। সাধারণ ফরাসি জনতা আরও বেশি করে শরিক হচ্ছেন এই চিন্তাধারার। ক্রমেই তাই নড়বড়ে হয়ে পড়ছে সামাজিক সুস্থিতি, সহাবস্থানের পরিবেশ। শতাব্দীর ভয়ঙ্করতম অতিমারি কিংবা ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলা একটা যুদ্ধ, আর তার সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধি এবং বেকারত্ব আরও বাড়িয়ে দেয় এই সামাজিক টানাপড়েন। তীব্র দক্ষিণপন্থার সহচর হয়ে পাশে থাকে উগ্র জাতীয়তাবাদ।
আর তাই, রুসো, ভলতেয়ারের মতো চিন্তানায়কদের দেশের নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ে এ বার ২৩.৫% ভোট পেলেন মেরিন ল্য পেঁ, যিনি অভিবাসনের বিরুদ্ধে, নিষিদ্ধ করতে চান হিজাব, অতীতে ব্রেক্সিটের স্টাইলে 'ফ্রেক্সিট' করে ফ্রান্সকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বার করার কথা বলেছেন, এবং ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাকে নির্বাচনের প্রচারেও ব্যবহার করেছেন। আশঙ্কায় ভুগছেন সে দেশের মুসলিম এবং ইহুদিরা।
ইমানুয়েল মাকরঁ (ছবিতে) নামের নেতাটি অবশ্য জীবনের প্রথম নির্বাচনেই তৈরি করেছিলেন নতুন এক ফরাসি রূপকথা, হয়ে যান ফ্রান্সের পঞ্চম প্রজাতন্ত্রের সর্বকনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট। আজকের ফরাসি সমাজের প্রেক্ষিতে, ক্ষয়িষ্ণু ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পটভূমিতে মাকরঁর মধ্যপন্থী ভারসাম্যের রাজনীতির প্রভাব অপরিসীম। অতি-ডান আর অতি-বামের প্রবল মেরুকরণে দীর্ণ ফরাসি সমাজের অনিবার্য এক ভাঙনকে আপাতত তিনি রুখে দিয়েছেন। তবু, এটাও ঠিক যে, পাঁচ বছরের শাসনকালে দক্ষিণপন্থার বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে এক প্রকার ব্যর্থই হয়েছেন মাকরঁ। এবং তাঁর নিজের অনেক পদক্ষেপও হয়েছে ডান-ঘেঁষা। যেমন, ২০২১-এর 'অ্যান্টি-সেপারেটিজ়ম ল', যা মুসলিম-বিরোধী বলে সমালোচিত হয়েছে ঘরে-বাইরে। আবার ২০১৮ সালে মাকরঁ ডিজ়েল ট্যাক্স বাড়ানোর ফলে ফ্রান্সে শুরু হয় 'ইয়েলো ভেস্ট' প্রতিবাদ। সেও তাঁর শাসনকালের এক তীব্র অস্বস্তি।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় সর্বাধিক দুই পর্বে। নির্বাচনে জনতা সরাসরি ভোট দেন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে। প্রথম পর্বে কোনও প্রার্থী ৫০%-এর বেশি ভোট না পেলে সর্বাধিক ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর সরাসরি লড়াই হয় দ্বিতীয় পর্বে, দু'সপ্তাহ পরে। এ বারে প্রথম পর্বে ২৭.১% সমর্থন পাওয়া ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁর সঙ্গে লড়াই হতে চলেছে ২৩.১% ভোট পাওয়া তীব্র দক্ষিণপন্থী মেরিন ল্য পেঁ-র। ২০১৭-তেও এঁদের মধ্যে লড়াই ছিল দ্বিতীয় পর্বে, তাতে ৬৬% ভোট পেয়ে বিশ্ব-রাজনীতিতে এক স্বপ্নের অভিষেক ঘটেছিল ৩৯ বছরের মাকরঁর। আজকের মাকরঁ পোড়-খাওয়া রাজনীতিক, কিন্তু আস্তিনে লুকোনো তাসের ম্যাজিক তাঁর আর অবশিষ্ট নেই কিছু। এ বারের নির্বাচনী চালচিত্রটাও অনেক বৈচিত্রপূর্ণ। প্রথম পর্বে মেরিন ল্য পেঁ ছাড়াও ৭%-এর বেশি ভোট পেয়েছেন তাঁর চাইতেও কট্টর দক্ষিণপন্থী প্রাক্তন মিডিয়া পণ্ডিত এরিক জেম্যুর। দ্বিতীয়
পর্বে এই সব ভোটের সিংহভাগই পড়বে মেরিন ল্য পেঁ-র বাক্সে।
২৪ এপ্রিলের দ্বিতীয় পর্বের ভোট বদলে দিতে পারে ফরাসি সমাজকে, সেই সঙ্গে ইউরোপেরও রাজনীতি আর সামাজিক প্রেক্ষিতকেও। প্রাক্-নির্বাচনী সমীক্ষায় দ্বিতীয় পর্বের ভোটে মেরিন ল্য পেঁ-র প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা মাকরঁর তুলনায় কম হলেও ভোট শতাংশের পার্থক্যটা কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরে নয়। এই সামান্য পার্থক্যটা ধুয়ে-মুছে যেতে পারে সহজেই। যেমন, দ্বিতীয় পর্বে যদি বামপন্থী কিংবা মধ্যপন্থী ভোটাররা ভোট দিতে উত্সাহ কিছু কম দেখান, তা হলেই জিতে যেতে পারেন মেরিন ল্য পেঁ। মাকরঁ সম্ভাব্য বিপদের আঁচ পেয়ে স্মরণ করিয়েছেন ছ'বছর আগেকার ব্রেক্সিটের-অঘটনের কথা। আর যদি তেমনটা সত্যিই হয়, সেটা কেবলমাত্র এক রাজনীতিকের জয় এবং অন্য জনের পরাজয় হয়েই থাকবে না, বাঁধ-ভাঙা জলরাশির মতো তীব্র দক্ষিণপন্থার জোয়ারে ভেসে যেতে পারে অভিবাসী-বিধ্বস্ত ফ্রান্স, এবং বাকি ইউরোপ। 'লিবার্তে, এগালিতে, ফ্র্যাতার্নিতে'র দেশ 'আত্মসমর্পণ' করতেই পারে, দক্ষিণপন্থার কাছে।
এ বারের নির্বাচন তাই যেন ২০২২-এর ফরাসি বিপ্লব। এই নির্বাচনে মাকরঁ জিতলে অতি-দক্ষিণপন্থায় খানিকটা হলেও রাশ পড়বে— ফ্রান্সে, ইউরোপে। ম্যার্কেলের বিদায়ের পরে ইইউ-এর নেতৃত্ব দেওয়ার জন্যও মাকরঁর কোনও বিকল্প নেই এই মুহূর্তে। যদিও তীব্র দক্ষিণপন্থার সঙ্গে কত দিন যুঝবেন মাকরঁ, না কি তাঁর ভারসাম্যের মধ্যপন্থাও একটু একটু করে ক্রমশ আরও দখিন-ঘেঁষা হয়ে পড়বে, সেটাই দেখার।
ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট, কলকাতা
Post A Comment:
0 comments so far,add yours