বিষয়টি হয় তো অবিশ্বাস্য মনে হবে। তবে এমন এক ধরনের পাখি আছে যারা বৃষ্টির জলের জন্য অপেক্ষা করে থাকে। আর সেই পাখিটির নাম চাতক পাখি। এই পাখির নামটা অনেকেই শুনেছেন। এই পাখিই বৃষ্টির জল ছাড়া অন্য কোনো জল পান করে না।
ইংরেজিতে এই পাখির নাম- 'পায়েড কুক্কু' (Pied cuckoo)।
আবহমান কাল ধরেই লক্ষ্য করা গেছে, দক্ষিণ ভারতের ট্রপিক্যাল অঞ্চল থেকে বাংলাদেশে উড়ে আসার কয়েকদিন পরই মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। তাই এই পাখিটির আগমণ 'আবহাওয়ার পূর্বাভাস ' বার্তাও বহন করে। কবি-সাহিত্যিকদের বর্ণনায় যেন, এরাই পিছু পিছু ডেকে নিয়ে আসে বর্ষাকে।
এই চাতক পাখি সাদা-কালো বর্ণের মিশ্রণের। এই পাখিটির ঝুঁটি, ঘাড়, পিঠ ও ডানা কালো। ডানার পাশটায় সামান্য সাদা ছোপ। গলা, বুক, পেট, লেজের নিচটা কালো কিন্ত লেজের প্রান্ত সাদাটে। চোখ, পা কালো। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। চেহারায় রাগী ভাব। তবে অত হিংস্র নয়। 'গ্রামাঞ্চলের মানুষ এদেরকে বড় বুলবুল পাখি বলে ভুল করে। ' সাধারণত এরা গাছের উঁচু ডালে থাকে তবে, মাঝেমধ্যে মাটিতে নেমে আসে। মাটিতে এদের হাটার ভঙিও অন্যরকম, তারা হাঁটে লাফিয়ে লাফিয়ে।
এই চাতক পাখির প্রধান খাবার পিঁপড়া, শুয়োপোকা, ঘাসফড়িং, লতাগুল্মের কচিপাতা। তাছাড়া এরা শুধুমাত্র বৃষ্টির জল পান করে। বৃষ্টির সময় আকাশে উড়ে উড়ে পড়ন্ত বৃষ্টির ফোটা পান করে এরা তৃষ্ণা মেটায়।
জুন থেকে আগস্ট মাসে কোকিলের মতো পরের বাসায় ডিম পাড়ে এরা। এরা নিজেরা বাসা বাঁধতে জানে না। একবারে ডিম পারার সংখ্যা এক থেকে দুইটি। দেখা গিয়েছে, ডিম পাড়ার আগে পুরুষ পাখিটি ছলনার আশ্রয় নেয়, সে সুরেলা ডাক দেয় যাতে অন্য পাখির মনযোগ সরাতে পারে এবং এই সুযোগে স্ত্রী পাখি ডিম পেড়ে আসে। ডিম ফুটে বাচ্চা হতে সাধারণত সময় লাগে ১৮থেকে ২০ দিন।
এই পাখি ২০ বছর বাঁচে। লোকমুখে শোনা যায় এই পাখি মৃত্যুর সময় মাটিতে পিঠ ঠেকিয়ে, পা দুটোই উপরের দিকে তুলে, ঠোঁট হা করে, চোখ দুটো খুলে আকাশের দিকে তাকিয়ে মারা যায়।
তথ্ এক ঝলক
Post A Comment:
0 comments so far,add yours