মঙ্গলবার রাতে কলকাতায় গাড়ির মধ্যে ধর্ষণের শিকার হন মূক ও বধির তরুণী। প্রজাতন্ত্র দিবসের আগের রাতের এই ঘটনা শহরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও অভিযোগের পর কালবিলম্ব না করেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশ। তবে দ্রুত এই গ্রেফতারি সম্ভব হতো কি যদি দোভাষী না থাকতেন। কারণ অভিযোগকারিণী মূক এবং বধির।


ঘটনার পরে নির্যাতিতা থানায় এলেও প্রথমে তাঁর বক্তব্য বুঝতেই হোঁচট খেতে হয় পুলিশকে। অভিযোগ বোঝা না গেলে তদন্ত হবে কী করে! এরকম ক্ষেত্রে ডাক পড়ে রজনী বন্দ্যোপাধ্যায়দের মতো 'সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ' বিশেষজ্ঞদের।

প্রগতি ময়দান থানার এই মামলাতেও তরুণীর বক্তব্য বুঝতে ডাকা হয়েছিল রজনীকে। প্রায় ১৬ঘন্টা ধরে নির্যাতিতার সঙ্গে থেকে এবং কথা বলে ঘটনার খুঁটিনাটি বুঝে, নির্যাতিতার বক্তব্য পুলিশকে জানান রজনী। এখনও পর্যন্ত ১০৩টি মামলাতে দোভাষীর কাজ করেছেন স্পেশাল এডুকেটর এবং সাইন লেঙ্গুয়েজ ইন্টারপ্রেটর রজনী। এই ঘটনা বা তদন্তের বিষয়ে কোনও কথা বলতে না চাইলেও, এ বারের মতো এত দ্রুত তদন্ত আগে দেখেননি বলে জানান তিনি। রজনী বলেন, 'ওই তরুণীর সঙ্গে কথা বলতে সকালেই থানাই পৌঁছে গিয়েছিলাম। একদফা কথা বলে ওর অভিযোগের কথা পুলিশকে জানিয়ে আমার কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম, কিন্তু ঘটনার গুরুত্ব বুঝেই বোধ হয় পুলিশ আমাকে আবার ডেকে আনে। লালবাজারের পুলিশ কর্তারা এসে তরুণীর অভিযোগের খুঁটিনাটি বুঝে নেন। এর আগে আমি বেশ কিছু ধর্ষণের ঘটনায় দোভাষীর কাজ করেছি। তবে এই মামলার মতো এত দ্রুত পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে দেখিনি।'

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টা নাগাদ সায়েন্স সিটির কাছে অম্বেডকর সেতুর কাছে জোর করে ওই তরুণীকে ট্যাক্সিতে তুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সামনের আসনেই গায়ের জোরে বসিয়ে রাখা হয় তরুণীকে। গাড়িতেই ধর্ষণ করা হয় বলে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন তরুণী। ওই দিন রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ৪ নম্বর সেতুর কাছে নামিয়ে দেওয়া হয় তরুণীকে। সকালে ট্রেন ধরে মগরাহাটে বাড়ি ফেরেন নির্যাতিতা। মা অসুস্থ হওয়ায় বাড়ির কাউকে প্রথমে এই ঘটনার কথা বলতেও দ্বিধা করেন। পরে থানায় অভিযোগ জানান এবং শুক্রবার অভিযুক্ত কামরে আলম ওরফে রাজা নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

একদিকে ওই তরুণী শারীরিক ভাবে মূক ও বধির তার উপর ধর্ষণের ঘটনা— এমন ক্ষেত্রে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়াই স্বাভাবিক বলে জানান রজনী। শুধু রজনী নয় ওই তরুণীর বক্তব্য বোঝার জন্য আরও এক দোভাষীর সাহায্য নেওয়া হয়। ঘটনার তদন্ত চলার পথে নির্যাতিতার সঙ্গে যাবতীয় কথাবার্তা চলে দোভাষীর সাহায্যে। রাত পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গ দেন দোভাষী রজনী। শুধু অভিযোগ দায়েরের জন্যই নয়, তদন্তের জন্য তরুণীর কাছ থেকে অভিযুক্তের বিবরণ, ঘটনার সময়ের যাবতীয় বিশদ তথ্য জানা জরুরি। দোভাষীর মাধ্যমে পুলিশ একই দিনে সেই সব তথ্য জানতে পারে পুলিশ। 'তদন্তকারীরা কোনও সময় নষ্ট করতে চাইছিলেন না বলে মনে হল। তদন্তের জন্য মাঝে মাঝেই নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলাও দরকার ছিল ওঁদের। তাই যত রাতই হোক না কেন, আমি যতটুকু ওঁদের সাহায্য করতে পারি করতে চাইছিলাম।' বলেন রজনী।



তথ্য সংগ্রহ-আনন্দবাজার পত্রিকা 

Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours