মনে হতেই পারে, আইএএস শ্রীনাথের এই কাহিনি হয়তো কোনো সিনেমার গল্প। কিন্তু এটাই বাস্তব। কোনো শিক্ষক তো দূরের কথা, বই-ই ছিল না তাঁর কাছে। অবলম্বন বলতে শুধু ওই স্মার্টফোন আর স্টেশনের ফ্রি ওয়াইফাই। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন, ইচ্ছে, পরিশ্রম আর নিষ্ঠার কাছে হার মেনেছে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা।
কলিঙ্গ টিভি-র রিপোর্ট অনুযায়ী, এরনাকুলামে কুলির কাজ করতেন কেরলের মুন্নার জেলার বাসিন্দা শ্রীনাথ। এই কাজ করে সংসার টানা তাঁর কাছে দায় হয়ে ঠেকে। কারণ, তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল সদস্য। ভবিষ্যতের কথা ঘুরপাক খেতে শুরু করে তাঁর মনে। সেখান থেকেই অন্য কিছু করার ইচ্ছের জন্ম। সংসার চালিয়ে মেয়ের ভবিষ্যত্ তৈরির জন্য এই সামান্য উপার্জন যে যথেষ্ট নয়, সেটাই তাঁর টনক নড়িয়ে দেয়।
শুরু হল নতুন যাত্রাপথ
তখন তাঁর বয়স ২৭ বছর। পরিস্থিতি বদলাতে ডবল শিফটে কাজ শুরু করেন। ফলে তাঁর দৈনিক আয় বেড়ে হয় ৪০০-৫০০ টাকা। এ ভাবে চরম পরিশ্রম করেও হাতে যা মিলছে, সেটা দিয়ে কি পরিবারের সকলের সব কিছু চাহিদা মেটানো সম্ভব! তাঁর জন্য মেয়ের ভবিষ্যতে সামনে প্রশ্ন চিহ্ন খাড়া হয়ে যাবে না তো! তা ছাড়া এ ভাবে দিনের পর দিন যে অস্বাভাবিক পরিশ্রম করা সম্ভব নয়, সেটাও বুঝতে পারেন কয়েক দিনের মধ্যেই।
এরই মধ্যে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে রেল স্টেশনে বিনামূল্যে ওয়াইফাই পরিষেবা চালু হল। এটাই শ্রীনাথের লক্ষ্য পূরণের জন্য দারুণ সুযোগ এনে দিল। আরও কঠিন প্রতিজ্ঞা করে বসলেন তিনি। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন শ্রীনাথ। কিন্তু এই ধরনের কঠিন পরীক্ষার প্রস্তুতিতে টিউশন দরকার। যা তাঁর কাছে শুধু ব্যয়বহুল-ই নয়, সাধ্যের বাইরেও। নিজের নিজের পথ তৈরি করে নেন। একটা স্মার্টফোন যে কোচিং ফি-এর অভাব মেটাতে পারে, সেটাই আবিষ্কার করে ফেলেন নিজের বুদ্ধিতে!
লক্ষ লক্ষ প্রার্থীর অনুপ্রেরণা
এ ভাবেই কঠোর পরিশ্রমে এবং নিষ্ঠার সঙ্গে প্রস্তুতি নিয়ে কেপিএসসি পাশ করেন শ্রীনাথ। চাকরি নিশ্চিত হয়ে যায়। কিন্তু কোথাও যেন অপূর্ণতা অনুভব করেন তিনি। প্রস্তুতি শুরু করেন ইউপিএসসি-র। আগের বারের সাফল্যের শক্তিতে আরও বেশি উদ্যমের সঞ্চার।
অবশেষে চতুর্থ বারের প্রচেষ্টায় ইউপিএসসি-র স্বপ্ন পূরণ হয় শ্রীনাথের। এ ভাবেই রেল স্টেশনের একজন সাধারণ কুলি থেকে দেশের প্রথম সারির এক সরকারি কর্তা হওয়া পর্যন্ত তাঁর এই অবিশ্বাস্য যাত্রা লক্ষ লক্ষ প্রার্থীর জন্য অনুপ্রেরণা!
Post A Comment:
0 comments so far,add yours