কর্ণাটকের পর গুজরাট, দিল্লি, মহারাষ্ট্রে, রাজস্থান। একের পর এক রাজ্যে করোনার নতুন রূপ ওমিক্রন -এর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। ফলে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। সম্প্রতি 'ওমিক্রন' আতঙ্কে নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশ থেকে আসা যাত্রীদের করোনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে অনেক জোর দেওয়া হচ্ছিল কেন্দ্রের তরফে।
জেনোম সিকোয়েন্সিং-এর ক্ষেত্রেও বেশি করে গুরুত্ব দেওয়া হয়। আর সেই জেনোম সিকোয়েন্সিং-এ প্রথমে কর্নাটকের দুজনের শরীরে ধরা পড়ে 'ওমিক্রন' ভ্যারিয়েন্ট। এর পর গুজরাটের এক ব্যক্তির শরীরে ধরা পড়ে এই নতুন ওমিক্রণ ভেরিয়েন্ট। আর রবিবার প্রথমে দিল্লির একজনের শরীরে এবং সন্ধ্যার দিকে মহারাষ্ট্রের আটজনের শরীরে ধরা পড়ে।
এই ওমিক্রন নিয়ে আগেই সতর্ক করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু। দক্ষিণ আফ্রিকায় চিহ্নিত করোনাভাইরাসের নতুন রূপ 'ওমিক্রন' নিয়ে সব রাজ্যকে আবারো নতুন করে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
রাজ্যে মাঝে বেশ কয়েকদিন ধরেই করোনা আক্রান্ত প্রায় প্রতিদিনই আটশোর উপরে থাকছিল। গতকাল করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই কমে হয়েছিল ৬২১ জন। সেটা আজ সামান্য বেড়ে হয়েছে ৬২০ জন। করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা গতকাল ১১ জন ছিল, সেটা আজ কমে ১০ জন হয়েছে।
রবিবারও করোনা আক্রান্তের চেয়ে সুস্থ হওয়া মানুষের সংখ্যা বেশি।রবিবার করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়েছে ৬২৭ জন। বর্তমানে রাজ্যের সক্রিয় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আট হাজারের নিচে নেমে ৭ হাজার ৬৩৯ জন। তবে উদ্বেগ বাড়িয়ে গোটা রাজ্যে গত ২৪ ঘন্টায় মাত্র ৪০ হাজার ২৩১ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে, যার মধ্যে ৬২০ জন করোনা পজিটিভ।
রাজ্যে করোনা পজিটিভিটি রেট গতকালের ১.৫৪% -র মতো অপরিবর্তিত রইল। রাজ্যে চিকিত্সক মহলের একাংশ বলছেন, যেখানে বারবার করে বলা হচ্ছে, আরও বেশি করে করোনা পরীক্ষা করার কথা, সেখানে রাজ্যে এখন খুবই কম সংখ্যক করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং তার ফলে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম থাকছে। এটা কিন্তু যথেষ্ট চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটা কমলেও রীতিমতো নিয়ম করে করোনা আক্রান্তের ক্ষেত্রে কলকাতার রেকর্ডকে অন্য কোনও জেলা টপকাতে পারছে না। কলকাতায় করোনা আক্রান্তের ক্ষেত্রে প্রতিদিনই সবথেকে বেশি থাকছে। গত ২৪ ঘন্টায় কলকাতায় গতকালের থেকে অনেকটা বেড়ে ১৭৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে, আর মৃত্যু কমে হয়েছে একজন।
অন্যদিকে এর পরই উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় গতকালের থেকে বেশ কিছুটা বেড়ে ১০৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে এবং করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। কলকাতার পাশের হাওড়া জেলায় আক্রান্ত অনেকটা কমে হয়েছে ২৯ জন। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাও পিছিয়ে নেই, সেখানে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৪৭ জন, সেখানে এদিন মৃত্যু হয়েছে ২ জনের।
হুগলি জেলাতেও গতকালের থেকে সামান্য বেড়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৪৮ জন, মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। নদীয়া জেলায় আজ আবার আগের দিনের থেকে সামান্য বেড়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ জন। তবে পশ্চিম বর্ধমান জেলায় করোনা আক্রান্ত আবার বেড়ে হল ২০ জন। তবে এদিন আবার কিছুটা উদ্বেগ বাড়িয়ে বীরভূম জেলায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ২১ জন।
উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল। দুদিন আগেই উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক ধাক্কায় অনেকটা বাড়লেও গতকাল থেকেই সেটা আবার বেশ খানিকটা নিয়ন্ত্রণ হয়েছিল, আজও তার ব্যতিক্রম নয়। আজ উত্তরবঙ্গের মধ্যে ব্যতিক্রমী ভাবে মালদা জেলায় সর্বাধিক ২৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। অন্যদিকে এরপরই দার্জিলিং জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমে ১৯ জন হয়েছে।
জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার জেলায় ১২ জন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় এদিন ১১ জন আক্রান্ত হয়েছে। তবে আশার কথা, বেশ কয়েকদিন পরে উত্তরবঙ্গের কোনো জেলায় আজ করোনা আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যু হয়নি।
আজ রাজ্যের মধ্যে সবথেকে কম করোনা আক্রান্ত হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া জেলা এবং উত্তরবঙ্গের কালিম্পং জেলা। এই তিনটি জেলাতেই আজ মাত্র একজন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর পর উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলায় আজ চারজন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান জেলায় ৫ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours