উঠোনে পরিত্যক্ত মাটির রান্নাঘরের সামনে বাঁধা পোষ্য কুকুর চিত্কার করছিল অনেকক্ষণ ধরে। বাড়ির লোকজনের সন্দেহ হওয়ায় সেখানে যেতেই দেখা গেল পরিবারের ছোট ছেলের ঝুলন্ত দেহ। যিনি পেশায় ছিলেন পিংলা থানার সিভিক ভলান্টিয়ার। সেই সঙ্গে কাজ করতেন জীবনবিমার এজেন্ট হিসেবে। সম্প্রতি শুরু করেছিলেন ইমারতি ব্যবসা।পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ওই ইমারতি ব্যবসাই কাল হল তাঁর। অনেককে ধারে ইমারতি সামগ্রী দিলেও টাকা পাচ্ছিলেন না। সেই অবসাদেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন তিনি।
ঘটনাটি ঘটেছে পিংলা থানার পিণ্ডরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের চণ্ডীপুর গ্রামে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম অভিজিত্ সামন্ত (৩৬)। মা, বাবা, স্ত্রী পাঁচ বছরের মেয়ে, দাদা, বৌদিকে নিয়ে থাকতেন তিনি। স্ত্রী বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা। এলাকায় হাসিখুশি ও কর্মচঞ্চল হিসেবেই পরিচিত ছিলেন তিনি। সেই ছেলে কেন আত্মঘাতী হল, তার সঠিক কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না পড়শিরা। অভিজিতের পাশের বাড়ির সুমারানি শী বলেন, 'খুব মিশুকে ছেলে ছিল। সকলের সঙ্গে অমায়িক ব্যবহার করত। এত বছর একেবারে পাশের বাড়িতে থাকলেও অভিজিতের পরিবারেও কোনও অশান্তি শুনিনি। ও কেন আত্মঘাতী হবে সেটাই বুঝতে পারছি না!'
বছর খানেক আগে ওই যুবকের পরিবারে নতুন সদস্য হিসাবে আসে পোষ্য কুকুর ইচি। অভিজিতই মূলত তার দেখভাল করতেন। জানা গিয়েছে, শনিবার দুপুর থেকে বাড়িতেই ছিলেন অভিজিত্। তবে সন্ধ্যার পরে থেকে তাঁকে আর দেখা যায়নি। পরিবারের সদস্যরা ভেবেছিলেন, কাছেপিঠে কোথাও বেরিয়েছেন। বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পরে ডাকাডাকি শুরু হয়। সাড়া মেলেনি। তখন তারস্বরে চিত্কার করছিল ইচি। পরিত্যক্ত মাটির রান্নাঘরের সামনে বাঁধা ইচির কাছে যেতেই দেখা যায় অভিজিতের ঝুলন্ত দেহ।
প্রাথমিকভাবে পরিবারের সদস্যদের মতোই পুলিশও মনে করছেন, আত্মঘাতীই হয়েছেন ওই যুবক। তাঁর পরিবার সূত্রে খবর, বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি অবসাদে ভুগছিলেন। বেশ কয়েকবার তাঁকে মৃত্যুর ইচ্ছের কথা বলতেও শোনা গিয়েছে। পেশায় মাইক্রোবায়োলজিস্ট অভিজিতের দাদা বিশ্বজিত্ বলেন, 'ভাই ইমারতি ব্যবসায় প্রচুর ক্রেতাকে ধারে জিনিস দিয়েছিল। সব মিলিয়ে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা ফেরত পাচ্ছিল না। কিন্তু তার জন্য এভাবে আত্মহত্যা করবে সেটা ভাবিনি। ইচির চিত্কার শুনে ছুটে গিয়ে আমার স্ত্রী-সহ সকলে ভাইয়ের ঝুলন্ত দেহ দেখে। জানি না কী হয়েছিল।''
Post A Comment:
0 comments so far,add yours