করোনার থাবায় গত বছর মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ। স্কুলের পাঠ বন্ধ হতেই সোজা বিয়ের পিড়িতে বসেছে সন্দেশখালি রাধারানি হাইস্কুলের এক ছাত্র! দীর্ঘ দিন পর মঙ্গলবার থেকে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জন্য স্কুল খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আপাতত নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত সে।আরও মন দিয়ে কাজ করতে চায় ওই পড়ুয়া। কারণ তাঁর কাঁধের উপর এখন অনেক দায়িত্ব। স্কুল নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নয় সে।সন্দেশখালির নস্কর পাড়ার বাসিন্দা ওই পড়ুয়া ২০২০ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। তার পরেই বন্ধ হয়ে যায় স্কুল। তার পর থেকেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে কাজ খুঁজেছে। আর সেই সঙ্গে টুক করে বিয়েটাও সেরে ফেলেছে ১৭ বছরের ওই নাবালক। এমনকী খুব শীঘ্র বাবাও হতে চলেছে সে। তাই এখন আরও বেশি করে কাজ করতে চাইছে ওই পড়ুয়া। সম্প্রতি হুগলিতে গাড়ি চালানোর কাজ পেয়েছে। আপাতত শ্বশুরবাড়িতেই আছে। তাঁর কথায়, 'স্কুল খুলেছে কয়েকদিন পর যাব। আমি বাবা হতে চলেছি। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি মন দিয়ে কাজটাও করতে হবে।'
তবে শুধু ওই ছাত্রই নয়, লকডাউনে বিয়ে করেছে আরও অনেক নাবালক-নাবালিকাই। রাধারানি হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিকাশচন্দ্র পাল বলেন, ''গত দেড় বছরে স্কুলের অনেক ছাত্রছাত্রীই বিয়ে করে নিয়েছে। ক'দিন আগে মাধ্যমিক পাশ করা এক ছাত্রী স্কুলে এসেছিল। দেখা মনে হল মা হতে চলেছে। তাই আর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ওঠা হল না। তবে কিছু কিছু পড়ুয়া স্কুলের সঙ্গে যুক্ত থাকবে সরকারি প্রকল্পের জন্য। কিন্তু পড়াশোনাটা আর হবে না।' স্কুল খুললেও কাজ ছেড়ে আর পড়াশোনার দুনিয়ায় ফেরার ইচ্ছা নেই অনেকেরই। তেমনই একজন গোবিন্দকাটি শিত্রানিকেতনের নবম শ্রেণির পড়ুয়া।
স্কুল বন্ধ হওয়ার পর দাদার হাত ধরে হাওড়ার সুইচ বোর্ড তৈরির কারখানায় কাজে ঢুকেছিল সে। তার দাদা কলেজে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু ভাই আর স্কুলে ফেরেনি। আপাতত তার উপার্জনের টাকাতেই সংসার চলছে। এমনকী দাদার পড়াশোনার খরচও চালাচ্ছে। আবার কনকনগর এসডি ইনস্টিটিউশনের দ্বাদশ শ্রেণির এক পড়ুয়া স্কুল বন্ধ হওয়ার পর তামিলনাড়ুতে কাজে চলে যায়। তবে তার মা চান ছেলে অন্তত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাটা দিক। পরীক্ষার আগে ছেলেরে ফিরে আসতে বলবেন বলেও জানান তিনি। করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে স্কুল খুলেছে ঠিকই। কিন্তু গত দেড় বছরে স্কুলে সঙ্গে সম্পর্কে একটা ছেদ পড়েছে। এই দূরত্ব খুব শীঘ্র ঘোঁচানো সম্ভব হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours