আরিয়ান এপিসোড নিয়ে শনিবার দিনভর যা চলল তা হার মানিয়ে দিতে পারে যে কোনও বেস্ট ক্রাইম থিলারের চিত্রনাট্যকে। শনি দেবতার প্রভাবে এদিন অনেকেরই দুর্গতি হয়েছে। এক বিজেপি নেতার শ্যালকের মাদক যোগ ও তাঁকে ক্রুজ থেকে আটক করার পর ছেড়ে দেওয়া, সেই নিয়ে এনসিপি ও কেন্দ্রের শাসক দলের নেতাদের একে অপরের উপর দোষারোপ, নবাব মালিকের ক্রমাগত তোপ দাগার পাশপাশি শাহরুখ খানের ড্রাইভারকে এনসিবির তলব সবই চলল গোটা দিন জুড়ে। আরিয়ান গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন খান পরিবার। পুত্র মাদক কাণ্ডে গ্রেফতার হতেই একটি বড় ব্র্যান্ঞ তাদের বিজ্ঞাপনের মুখ থেকে ছেঁটে ফেলেছেন শাহরুখ খানকে। শোনা যাচ্ছে, এতে কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন বলিউড বাদশা। এখানেই শেষ নয় শনিবার মাদক কাণ্ডে নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যু রোর জেরার সম্মুখীন হলেন কিং খানের গাড়িচালক।
মাদক মামলায় শাহরুখের গাড়ির ড্রাইভারকে সমন পাঠিয়েছিল এনসিবি। সেই মতো তদন্তকারী আধিকারিকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাঁকে। জানানো হয়েছে, তদন্তের জন্য জরুরি এই জেরা পর্ব। আরিয়ান আগে থেকেই মাদক সেবনের সঙ্গে যুক্ত ছিল কিনা বা কোনো মাদক ব্যরবসায়ীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল কিনা সেটা জানার জন্যই এই জেরা। উল্লেখ্য, ৭ অক্টোবর আরিয়ানদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের রায় দিয়েছিল ম্যা জিস্ট্রেট কোর্ট। আদালতে এনসিবি-র তরফে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল অফ ইন্ডিয়া, অনিল সিং দাবি করেন অভিযুক্তদের জামিনের আবেদন অস্পষ্ট এবং গ্রহণযোগ্যন নয়। সেটা আদালত বিচার করুন। আরিয়ানের হয়ে আদালতে সওয়াল জবাব করেন আইনজীবী সতীশ মানশিন্ডে। তিনি পালটা দাবি করেন, এনসিবি ক্রুজ পার্টিতে আরিয়ানকে মাদক সেবন করতে দেখেছে কিন্তু তাঁর কাছ থেকে কোনও মাদক উদ্ধার হয়নি।
এমনকি যে হোয়াটস অ্যাপ চ্যাটের কথা এনসিবি দাবি করছে সেটিও মাদক সংক্রান্ত নয়, ফুটবল সংক্রান্ত। আদালতে ক্ষোভ উগরে দেন আরিয়ানও। তাঁর অভিযোগ, ক্রুজে ১৩০০ জন লোক ছিলেন। কিন্তু এনসিবি বেছে বেছে তাঁদের মতো ১১ জনকে কেন গ্রেফতার করল? তিনি জানিয়েছেন, প্রতীক নামের এক বন্ধু পার্টির উদ্যোক্তাদের সঙ্গে তাঁর আলাপ করায়র। আরিয়ান আসলে পার্টির গুরুত্ব বাড়বে, এই অনুরোধেই আসতে রাজি হয়েছিলেন তিনি। ক্রুজে হানা দিয়েই তাঁর ব্যা গ তল্লাশি করেছিল এনসিবি। কিন্তু কোনও মাদক পাওয়া যায়নি, এমনি দাবি আরিয়ানের। যদিও লাভের লাভ কিছুই হয়নি। শুক্রবারই আর্থার রোড জেলে ঠাঁই হয় আরিয়ানদের। এদিকে, মুম্বইয়ে ক্রুজ শিপ মাদক মামলায় আটক ১১ জনের মধ্যে তিনজনকে ছেড়ে দিয়েছিল এনসিবি। আর এতে বিজেপির যোগসাজশ রয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। বাকিদের বাদ দিয়ে তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এনসিবির বিরুদ্ধে এদিন তোপ দেগেছেন মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী তথা এনসিপি-র মুখপাত্র নবাব মালিক।
তিনি এদিন সাংবাদিকদের একটি ভিডিয়ো দেখান। সেখানে তিনি ছেড়ে দেওয়া তিনজনের মধ্যে প্রথমে ঋষভ সচদেবের নাম উল্লেখ করেন। নবাব মালিক বলেন, ঋষভ বিজেপির যুব মোর্চার অধ্যক্ষ মোহিত কম্বোজ ওরফে মোহিত ভারতীর শ্যালক। ভিডিওটিতে মোহিতের সঙ্গে ঋষভের ছবিও দেখানো হয়। এনসিবি ঋষভকে ছেড়ে দেওয়ার সময়, তাঁর সঙ্গে তাঁর বাবা ছিলেন। বাকি দু'জন প্রতীক গাভা ও আমির ফার্নিচারওয়ালা। নবাব মালিক দাবি করেন, এঁদের দু'জনের আমন্ত্রণেই আরিয়ান খান ওই ক্রুজ শিপে গিয়েছিলেন। এমনকি কোর্টে মামলার শুনানির সময়েও ওই 3 জনের নামোল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এরপরই তিনি অভিযোগ তোলেন, কী করে ২ ঘণ্টার মধ্যে তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হল? তাঁর মতে এটা এনসিবি-বিজেপি ষড়যন্ত্র। পাশপাশি সাংবাদিক সম্মেলনে মালিক আরও জানান, ক্রুজ শিপে তল্লাশি চালানোর দিন সমীর ওয়াংখেড়ে সাংবাদিকদের জানান যে ৮-১০ জনকে আটক করা হয়েছে। এনসিপির এই নেতার মতে, এটি পুরোপুরি মিথ্য। তিনি জানান ওই সময় আসলে ১১ জনকে আটক করা হয়েছিল । রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সমস্ত তথ্য রয়েছে মুম্বই পুলিশের কাছে ।
সেদিন ত্রুজ শিপে ১২ ঘণ্টা ধরে এক হাজার ৩০০ লোকের তল্লাশি চালানো হয়। তার মধ্যে মাত্র ১১ জনকে আটক করে এনসিবি অফিসে আনা হয়েছিল। এরপর কার নির্দেশে এনসিবি তিনজনকে ছেড়ে দিল? প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী নবাব মালিক। তিনি সমীর ওয়াংখেড়ের কল রেকর্ড চেক করার দাবিও তোলেন সাংবাদিক সম্মেলনে। নবাব মালিকের দাবি, সমীর ওয়াংখেড়ের সঙ্গে দিল্লি এবং মহারাষ্ট্রের বিজেপি নেতাদের কথা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এনসিপির এই শীর্ষ নেতা। আগেও এই গ্রেফতারি প্রসঙ্গে তোপ দেগেছিলেন শরদ পাওয়ারের দল তথা মহারাষ্ট্রে উদ্ধব সরকারের সহযোগী ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির মুখপাত্র নবাব মালিক। তাঁর দাবি ছিল, বিজেপি এবং এনসিবির যোগসাজশের জেরেই শাহরুখপুত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মহারাষ্ট্র সরকার এবং বলিউডের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই এই চক্রান্ত করা হয়েছে বলেও দাবি তাঁর। ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্তের দাবি জানান তিনি। এদিকে মোহিত কম্বোজ তাঁর শালকের প্রসঙ্গে বলেন, মুম্বই ক্রুজ শিপ ড্রাগ কেসের তদন্তের জন্য এনসিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া তার শ্যালক ঋষভ সচদেবকে। কিন্তু পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কারণ এনসিবি তাঁকে জড়িত করার কিছু খুঁজে পায়নি। মোহিত ভারতী বলেন, 'আমি আমার ভগ্নিপতিকে নিয়ে গর্বিত যে তিনি এনসিবিকে সহযোগিতা করেছেন।' ঋষভকে নিয়ে নবাব মালিকের অভিযোগের পরই মোহিত এই মন্তব্য করেন।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours