কৌশলে 'হাতিয়ে নেওয়া' হয়েছে জমি। বসত বাড়ি থেকেও উচ্ছেদের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। জুটছে শারীরিক, মানসিক 'নির্যাতন'ও। নিজের বড় মেয়ের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ করেছেন পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী ২ ব্লকের বিশ্বরম্ভা গ্রামের এক ষাটোর্ধ দম্পতি। মঙ্গলবার দুপুরে কালনার এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অভিযোগ জানান তাঁরা।যদিও অভিযোগ মানতে চাননি তাঁদের বড় মেয়ে। তাঁর দাবি, 'অভিযোগ ভিত্তিহীন'।
বিশ্বরম্ভা চাঁপাতলা এলাকার বাসিন্দা ননীবালা দাস এবং রাধেশ্যাম দাসের আইনজীবী অরিন্দম বাজপেয়ী এ দিন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বিধানচন্দ্র বিশ্বাসকে জানান, রাধেশ্যামবাবু অসুস্থ। তাঁর হাঁটাচলার ক্ষমতা নেই। তাঁরা যে অটোয় আদালতে এসেছিলেন, তার সামনে এসে কথা শোনার আর্জিও জানানো হয়। দোতলা থেকে নেমে দম্পতির অভিযোগ শোনেন ওই আধিকারিক। ননীবালাদেবী জানান, তাঁদের চার ছেলে মেয়ে। বড় মেয়ে মঞ্জুরানি দাসের বিয়ে হয়েছে পূর্বস্থলীর বাগাচারা গ্রামে। তবে বছরখানেক ধরে বাপের বাড়িতে রয়েছেন তিনি। স্বামীর নামে থাকা বিঘে দেড়েক চাষজমি, তাঁর নামে থাকা দেড় কাঠা জমি বড় মেয়ে 'ভুল বুঝিয়ে' লিখিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর দাবি, ''বড় মেয়ে আমাদের দেখভাল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এখন শারীরিক, মানসিক অত্যাচার চালাচ্ছে।'' তাঁর আরও অভিযোগ, মাসখানেক আগে তাঁকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে মুখে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করে মেয়ে। মারধরও করে। প্রথমে পূর্বস্থলী স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পরে নদিয়ার শক্তিনগর হাসপাতালে চিকিত্সা হয় তাঁর। বৃদ্ধা জানান, স্বামী ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না। বড় মেয়ের কাছ থেকে নিজেদের জমি ফেরত চান তাঁরা। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার আশ্বাস দেন তাঁদের।
বৃদ্ধা জানান, তাঁদের ছোট ছেলে অন্যত্র বসবাস করেন। বড় ছেলে ওই গ্রামে থাকলেও তাঁর অবস্থা ভাল নয়। বড় মেয়েই ভরসা ছিলেন তাঁদের। কিন্তু তিনি তাঁদের তাড়াতে চান, অভিযোগ বৃদ্ধার। তাঁদের আইনজীবীর দাবি, ''অত্যাচারের কথা জানিয়ে প্রথমে এসডিইএম আদালতে সিনিয়র সিটিজেন ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ এবং বিএলআরও-কে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রশাসন সক্রিয় হতেই বৃদ্ধার মুখে অ্যাসিড ঢালার চেষ্টা, মারধরের ঘটনা ঘটে।'' এ দিন এসডিইএম আদালত বিএলআরও এবং পুলিশকে ওই দম্পতির নিরাপত্তা এবং বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন।
মঞ্জুরানির আইনজীবী বিকাশ রায়ের পাল্টা দাবি, ২০১৬ সালে রাধেশ্যাম দাস সম্পত্তির কিছু অংশ স্ত্রী ও কিছু অংশ বড় মেয়েকে দেন। তাতে পরিবারের আরও দুই সদস্য ক্ষুণ্ণ হন। সে রাগ পড়ে মঞ্জুদেবীর উপরে। তাঁদের 'মদতেই' মামলা করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, ''বড় মেয়ে নন, পরিবারের অন্যেরাই অত্যাচার করছে ওঁদের উপরে। আদালতে প্রমাণ দেব আমরা।'' মঞ্জুরানিও বলেন, ''মা-বাবার উপরে কোনও অত্যাচার করা হয়নি। সম্পত্তিও কেড়ে নেওয়া হয়নি। অভিযোগ ভিত্তিহীন।'
Post A Comment:
0 comments so far,add yours