কোভিড ১৯-এর (Covid 19) একাধিক ঢেউয়ে আক্রান্ত দেশ। দেড় বছরেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত। কিন্তু কোনও ভাবেই কোভিড থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাওয়ার কোনও রাস্তাই দেখা যাচ্ছে না। স্কুল, কলেজ একপ্রকার বন্ধ। বাড়ি থেকেই চলছে পড়াশোনা এবং অফিস। এদিকে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাঁদের মতে ফের আসতে চলেছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। তাতে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন অনেকে। এই পরিস্থিতি যতদিন না সম্পূর্ণ কাটছে ততদিন পর্যন্ত প্রত্যেককে সচেতন থাকতে হবে। নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে খাওয়া-দাওয়ায়। কারণ কোভিড থেকে সেরে উঠতে প্রয়োজন সঠিক মাত্রায় পুষ্টিকর খাদ্য। কী কী খাদ্য এই সময় খাওয়া প্রয়োজন? আলোচনা করা হবে এই প্রতিবেদনে।
কোভিড সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হচ্ছ। এবং তা প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ এই প্রতিবেদনে রয়েছে চন্দ্রকান্ত লহরিয়ার (Chandrakant Lahariya) মতামত। যিনি প্রখ্যাত চিকিৎসক এবং করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা করছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি একজন অতিমারী বিশেষজ্ঞ। করোনার প্রভাবে সাধারণ মানুষের জীবনে কী ধরনের পরিবর্তন হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি।
প্রশ্ন- করোনার প্রভাবে কি সাধারণ মানুষের ঘুমের কোনও পরিবর্তন এসেছে?
উত্তর- কোভিড ১৯ ঘুমের ক্ষেত্রে বিপুল প্রভাব ফেলেছ। এবিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া গেছে অতীতের বেশ কয়েকটি রিপোর্টে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে অনেকে আগের থেকে অতিরিক্ত বেশি ঘুমোচ্ছেন। তাঁদের ঘুমের প্যাটার্নের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্য করা গিয়েছে। আবার একাংশের মধ্যে দেখা গিয়েছে তাঁরা আগে যে পরিমাণ ঘুমোতেন বর্তমানে সেই পরিমাণ ঘুমোচ্ছেন না। কোভিডের কারণেই এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, ঘুমোনোর সময়েও বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছে। যেমন অনেকের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে তাঁরা অতীতে ঘুমোনোর সময় ঘামতেন না। কিন্তু কোভিড পরবর্তী সময়ে দেখা গিয়েছে তাঁরা ঘুমোনোর সময় ঘেমে যাচ্ছেন।
এর কারণ হিসেবে দেখা গিয়েছে, মানসিকভাবে অনেকেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আর সেকারণে তা প্রভাব ফেলেছে ঘুমের ক্ষেত্রে। শারীরিক প্রভাবের পাশাপাশি মানসিকভাবেও করোনা যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে তা থেকেই এই সমস্যার তৈরি হচ্ছে।
প্রশ্ন- কোভিড সময়ে কি বিভিন্ন ওষুধ সেবনের পরিমাণ বেড়ে গেছে?
উত্তর- বিভিন্ন দেশের গবেষণায় উঠে এসেছে সেই সব দেশে কোভিড সময়ে ওষুধ সেবনের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু সৌভাগ্যবশত ভারতে এই ধরনের কোনও রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। তবে সরকারের উচিত এই সময় ওষুধ সেবনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পর্যালোচনা করা এবং নজরদারি চালানো।
প্রশ্ন- কোভিড থেকে উঠতে অ্যালকোহল সেবন কতটা সমস্যা তৈরি করেছে?
উত্তর-অতিরিক্ত পরিমাণে মদ সেবন শরীরে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে। আমরা প্রত্যেকেই কম-বেশি জানি মদ্যপান শরীরে কতটা খারাপ প্রভাব ফেলে। হার্টের রোগ থেকে শুরু করে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, একাধিক ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলে মদ্যপান। করোনা পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত মদ্যপান ফুসফুস উপর প্রভাব ফেলতে পারে। যা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা আরও বাড়াতে পারে। পাশাপাশি করোনা যে শুধু শারীরিক প্রভাব ফেলে এমনটা নয়, মানসিক প্রভাবও ফেলে। তাই মানসিক সমস্যা থেকে বের হতে অতিরিক্ত মদ্যপান বন্ধ করা দরকার।
প্রশ্ন- সেকেন্ডারি লাইফস্টাইল কি কোভিড সেরে ওঠার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে?
উত্তর- কোভিড ছাড়াও শারীরিক সমস্যার অন্যতম কারণ সেকেন্ডারি লাইফস্টাইল। সুস্থ থাকতে হলে চারটি বিষয় আমাদের প্রত্যেককে মাথায় রাখতে হবে। প্রথমত প্রতি দিন নিয়মিত শরীরচর্চা, দ্বিতীয়ত সুষম আহার, তৃতীয়ত ধূমপান বর্জন এবং সর্বশেষ সম্পূর্ণ ভাবে অ্যালকোহল বর্জন। যদি আমরা প্রত্যেকে এই চারটি বিষয় মাথায় রাখতে পারি তাহলে আমরা অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাব। যেমন হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমবে, কিডনির সমস্যা কমবে এবং অনান্য জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকবে। প্রত্যেককে মানসিক ভাবে শক্ত থাকতে হবে। প্রতিজ্ঞা নিতে হবে গতকালের থেকে আজ বেশি শরীরচর্চা করব এবং আজকের থেকে আগামীকাল বেশি শরীরচর্চা করব। তবেই সুস্থ থাকা সম্ভব।
প্রশ্ন- কোভিড থেকে সুস্থ হতে গেলে কি ধূমপান ছাড়তেই হবে?
উত্তর- কোভিড হোক বা অন্য কোনও রোগ- ধূমপান সব ক্ষেত্রেই ক্ষতিকারক। ধূমপান যত দ্রুত ছাড়া সম্ভব ততই শরীরের পক্ষে মঙ্গল। বহু গবেষণায় প্রমাণিত যে ধূমপান শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। রক্ত জমাট বাঁধা, ফুসফুসের সমস্যা, ক্যানসার, ব্লিডিং সহ একাধিক সমস্যা তৈরি হতে পারে ধূমপানের ফলে। এমনকী দীর্ঘকালীন প্রদাহ দেখা যেতে পারে।
এবার আসা যাক করোনা প্রসঙ্গে। চিনে একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যাঁরা ধূমপায়ী নন তাঁদের থেকে ধূমপায়ীদের কোভিড আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যা ৩ গুণ বেশি। এমনকী তাঁদের ICU-তে পর্যন্ত ভর্তি হতে হয়েছে। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল ফর মেডিসিনেও (New England Journal of Medicine) এই বিষয়ে একটি তথ্য প্রকাশ হয়েছে। যেখানে দেখা গিয়েছে ধূমপায়ীরা বেশি পরিমাণে কোভিডে আক্রান্ত এবং তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল।
প্রশ্ন- কফি খেলে কি কোভিড থেকে সেরে উঠতে বেশি সময় লাগে?
উত্তর- অতিরিক্ত পরিমাণে চা, কফি, সফট ডিঙ্কস শরীরে পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এগুলি অতিরিক্ত খেলে খুমের সমস্যা তৈরি হতে পারে। কফি খেলে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সাময়িক আরাম পাওয়া গেলেও দীর্ঘকালীন মেয়াদে শরীরে অত্যন্ত খারাপ প্রভাব ফেলে। রক্তচাপ বৃদ্ধি, ঘুম না হওয়া, মাইগ্রেন, দুশ্চিন্তা সহ একাধিক সমস্যা হতে পারে। প্রতিটি মানুষের উচিত সন্ধে ৬টার পর চা, কফি ইত্যাদি পানীয় না গ্রহণ করা। এতে শরীর সুস্থ থাকে।
প্রশ্ন- শর্করা জাতীয় খাবার শরীরে কতটা সমস্যা তৈরি করে?
উত্তর- সোডা, সফটড্রিঙ্কস, প্যকেটজাত খাবার, সিরাপ ইত্যাদি শরীরে জন্য অত্যন্ত খারাপ। কারণ এগুলি সুষম আহার নয়। বিভিন্ন রিপোর্টে প্রকাশ, ভারতে তৈরি অনেক পানীয় শরীরের জন্য অত্যন্ত খারাপ। এই ধরনের পানীয় গ্রহণ করার ফলে তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এমনকী, এই ধরনের পানীয় গ্রহণে দেহে সুগার লেভেল অনেকটাই বেড়ে যায়। তাই যতটা সম্ভব এই ধরনের খাদ্য বর্জন করা উচিত। পাশাপাশি প্যাকেটজাত চিপসও খাওয়া শরীরে অনেক সমস্যা তৈরি করে।
sorce from news 18
Post A Comment:
0 comments so far,add yours