প্রায় দেড় বছর অতিক্রান্ত এখনও অনেকেই করোনা (Long Covid) আক্রান্ত হচ্ছেন। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা এবার দেশে আছড়ে পড়বে করোনার তৃতীয় ঢেউ (Corona third wave)। তাতে আক্রান্তদের মধ্যে থাকবে অধিকাংশই শিশু। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমস্ত রকম প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। পাশাপাশি বিজ্ঞানীদের তরফ থেকে নতুন কিছু আবিষ্কারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। যাতে করে সম্পূর্ণরূপে থামানো যায় করোনার আক্রমণ।
করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলেও বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। মাস্ক ব্যবহার, নিয়মিত হাত ধোয়া এবং দূরত্ব বজায় রাখার ওপর জোর দিয়ে বলেছেন তারা। কোভিডের ক্ষেত্রে দেখা গেছে আক্রান্ত কিছু মানুষ সেরে উঠেছেন খুব তাড়াতাড়ি। এবং অনেকের কোভিড থেকে সেরে উঠতে বেশ কিছুটা সময় লেগেছে। এই ধরনের লং কোভিড সমস্যায় ভুগেছেন করোনা আক্রান্ত পাঁচ জনের মধ্যে একজন।
লং কোভিডের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আক্রান্তরা দীর্ঘদিন ধরে কোভিড পজিটিভ ছিলেন। এমনকী তাদের শরীরেও কোভিডের উপসর্গগুলি দীর্ঘদিন ধরে ছিল। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন যারা মূলত কোভিদের ডেল্টা ভেরিয়েন্টের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের শরীরে লং কোভিডের (Long Covid) প্রভাব পড়েছে বেশি। পাশাপাশি গবেষণায় উঠে এসেছে কাদের সবথেকে বেশি কোভিডে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে যৌথ ভাবে একটি গবেষণা চালিয়েছে আমেরিকার স্বাস্থ্য বিভাগ এবং হিউম্যান সার্ভিস। যেখানে মোট ৩৬৬ জন মানুষের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। ওই ৩৬৬ জন-ই ২০২০ সালের এপ্রিল এবং ডিসেম্বর মাসের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের শরীরে কী ধরনের উপসর্গ দেখা দিয়েছিল সেই বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করা হয় করোনা থেকে সেরে ওঠার পর কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাদের।
আক্রান্তদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ প্রায় একই ধরনের উপসর্গের কথা বলেছেন।তারা জানিয়েছেন করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা হচ্ছিল। এমনকী তাদের গন্ধ এবং স্বাদ পেতে সমস্যা হচ্ছিল। পাশাপাশি গা হাত পা ব্যথা, ক্লান্তি অনুভব হচ্ছিল তাদের।এই ধরনের সমস্যাগুলি করোনার মূল উপসর্গ বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
কোন কোন শ্রেণির মানুষ লং কোভিডে (Long Covid) আক্রান্ত হতে পারেন?
মহিলা- আগে জানা গিয়েছিল, করোনায় মহিলাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা কম। কিন্তু এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যেসব মহিলারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন তারা লং কোভিডে ভুগতে পারেন। অর্থাৎ করোনা তাদের শরীরে দীর্ঘদিন ধরে বাসা বাঁধতে পারে। পাশাপাশি মহিলারা সেরে ওঠার পরেও বেশ কিছু সমস্যায় ভুগতে পারেন। তার মধ্যে অন্যতম ক্লান্তি ভাব এবং ঋতুচক্রের পরিবর্তন। এমনকী গোটা শরীরে ব্যথা অনুভব করতে পারেন তারা।
৪০ বছরের বেশি মানুষ মানুষরা- ৪০ বছরের পর থেকেই সাধারণ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশ কিছুটা কমে যায়। এবং বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা লোপ পায়। যার ফলে শরীরে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে।এর ফলে শরীরে কোন ভাইরাসের আক্রমণ হলে শরীর সেভাবে সেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে না। এবং সেই রোগের সঙ্গে লড়াই করতে বেশ কিছুটা সময় লাগে। আর এটাই কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ। কেননা, ৪০ বছরের পর কেউ করোনা আক্রান্ত হলে, ভাইরাসের বিরুদ্ধে সেভাবে লড়াই করতে পারে না শরীর।
কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ লং কোভিডে বেশি আক্রান্ত- বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে লং কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন এমন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের সংখ্যা বেশি। এবং এর জন্য মনে করা হচ্ছে জিনগত পরিবর্তনের জন্যই তারা বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। গবেষণায় আরও একটি বিষয় উঠে এসেছে, কৃষ্ণাঙ্গ মানুষরা মধুমেহ এবং বিভিন্ন রোগে বেশি ভোগেন। আর সে কারণে তারা কোভিডে বেশি সংখ্যায় আক্রান্ত হয়েছেন।
যাদের রোগ প্রতিরোধ (Immunity) ক্ষমতা দুর্বল তাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি- গবেষণায় উঠে এসেছে যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তারা করোনায় বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। শুধু তাই নয় তাদের মধ্যে অনেকেই লং কোভিডে ভুগেছেন। কারণ করোনাভাইরাস হামলা চালানোর পর তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত নয় শরীর। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকার জন্যই শরীরে দীর্ঘ সময় ধরে বাসা বেঁধে থাকছে করোনা।
করোনা থেকে বাঁচতে হলে ভ্যাকসিন নেওয়া যেমন জরুরি তেমনই সুষম আহার অত্যন্ত জরুরি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন ডাল, ডিম, চিকেন খাওয়া যেমন জরুরি তেমনি খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে বিভিন্ন সবজি। এর সঙ্গে প্রতিদিন ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। খাদ্যতালিকায় এই খাবারগুলি রাখার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে ধূমপান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। কারণ ধূমপানের ফলে করোনা থেকে সেরে উঠতে দেরি হতে পারে। এমনকী মদ্যপানও করা যাবে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বাইরের খাবার, ফাস্টফুড সম্পূর্ণরূপে বর্জন করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আরও পড়ুন -করোনা কি শেষ পর্যন্ত সাধারণ জ্বর হিসেবে থেকে যাবে? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা!
এই খাবার গুলি গ্রহণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তো বাড়বেই না উল্টে শরীর অন্য রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই এই সময় যতটা সম্ভব সুষম আহার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
ভ্যাকসিন (Corona Vaccine) নিলে কি সুরাহা মিলিবে?
বিশেষজ্ঞ এবং সরকারের তরফ থেকে বারবার প্রচার চালানো হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব ১৮ বছরের উপরে প্রত্যেকেই যেন করোনা টিকা গ্রহণ করেন। কারণ করোনা টিকা নেওয়ার পর কারোর শরীরে করোনা আক্রমণ করলেও মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে না। এমন বেশকিছু রিপোর্টে উঠে এসেছে করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও যারা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। এমনকী, তাদের হাসপাতলে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয়নি। সেক্ষেত্রে কোনও ভুয়ো তথ্য না বিশ্বাস করে সঠিক সময়ে করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞদের তরফে বারবার আর্জি জানানো হচ্ছে।
করোনা ভ্যাকসিন নিলে লং কোভিডের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে ভ্যাকসিন নেওয়ার পর শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা, ক্লান্তি, গা হাত পা ব্যথা সহ একাধিক সমস্যা নির্মূল হয়ে গেছে। তবে সব কিছুর মধ্যেই কোভিড প্রোটোকল মেনে চলার জন্য আর্জি জানানো হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে ভ্যাকসিন এবং সঠিকভাবে কোভিড প্রটোকল মেনে চললে করোনাকে নির্মূল করা সম্ভব। পাশাপাশি শিশুদেরও সাবধানে রাখতে হবে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours