সাদামাটা জীবনে নিজের ছোট্ট ঘরই রাজবাড়ী। কাজকে ভালোবেসে সাধারণ মানুষের মনে দাগ কাটতে চান। কাজপাগল বাগুইহাটীর স্ট্যাচু শিল্পী কৃষ্ণ বৈরাগীর এমনই বক্তব্য উঠে এসেছে সাংবাদিকদের সাক্ষাত্কারে।
স্বয়ং হরনাথ চক্রবর্তী কৃষ্ণ বৈরাগীকে সিনেমায় অভিনয় করার প্রথম সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তাঁর অসাধারণ গানে মুগ্ধ হয়ে খুশি হয়েছিলেন মিঠুন চক্রবর্তীও। টলিপাড়ার অন্যতম নায়ক দেব দিতে চেয়েছিলেন চাকরি। কিন্তু তিনি চাকরি করতে নাকচ করেন । তাঁর মতে শিল্পী মানুষ কখনই বদ্ধ হয়ে থাকতে পারে না। তাহলে শিল্পীসত্তাটাই হারিয়ে যায়।
ছোটবেলা থেকেই যে কোন গ্রামের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বহুরূপী সাজতেন। বহুরূপী সেজে নিজের অঞ্চলে পরিচিত হয়েছেন বহুরূপী নামেই। তাঁর পেশা এখন বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা সভায় বিশিষ্ট মানুষের জীবন্ত চেহারায় সেজে ওঠা। কখনো হন কাল মার্কস , লেনিন , লাদেন । কখনোবা রবি ঠাকুর থেকে শ্রীরামকৃষ্ণ । আবার কখনো চার্লি চ্যাপলিন বা মিলখা সিং। বহুরূপীর মতো , বহু প্রতিভার অধিকারী জগত্পুরের এই কৃষ্ণ বৈরাগীর। অনুষ্ঠানে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন দশ ঘন্টা। তার মতে স্ট্যাচু অবস্থায় যদি তাঁকে কেউ চিমটি কাটে , ইঁট মারে বা শরীরে পিঁপড়ে ছেড়ে দেয় তাও স্ট্যাচুর কোন নড়চড় হবে না। কাজের প্রতি তাঁর এতটাই গভীর ভালবাসা। এছাড়াও তাঁর মধ্যে রয়েছে অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা এবং সুরেলা গলা। নিজের হাতের বানানো একতারাতেই গেয়ে ওঠেন নানান ফোক গান।
কৃষ্ণ বৈরাগীর রাজনীতি একেবারে অপছন্দ । তাঁর মতে , তাঁর জীবনে অনেক রং আছে কিন্তু রাজনীতি নেই । হাজার লোকের মাঝখানে গিয়ে তিনি ঝান্ডা ধরতে পারবেন না । তিনি সর্বদা থাকতে চান মঞ্চের উপরে। স্ট্যাচু থাকার পাশাপাশি তিনি অভিনয় করেছেন একাধিক স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিতে , বানিয়েছেন ডকুমেন্টারি। একসময়ের জনপ্রিয় সিরিয়াল 'পটল কুমার গানওয়ালা'তেও অভিনয় করেছিলেন । অভিনয় গুণের কারণে টলিপাড়ার বিভিন্ন অভিনেতার কাছে তিনি পছন্দের এক মানুষ। ১৯৯৯ সাল থেকে শুরু করে দীর্ঘ বাইশ বছর তিনি যুক্ত থেকেছেন নানান শিল্পকর্মেই। তাঁর এমনই সুন্দর অথচ বিক্ষুব্ধ জীবন নিয়ে ' অচল ' নামের সিনেমাও তৈরি হয়েছে।
তবে করোনার কারণে গত দেড় বছর কৃষ্ণ বৈরাগী হাতে নেই কোন কাজ । যেটুকু আর্থিক সম্বল ছিল তাও প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। কিন্তু তিনি অর্থ বা দয়া চান না , চান কাজ করতে। তাই আর্জি জানিয়েছেন যাতে কাজ দিয়ে তাকে কেউ সাহায্য করেন। তাঁর কথায় - " সারা জীবন এই ভাবে চলবো . জীবনের এগিয়ে যাওয়ার পথটাই হলো বেশিরভাগ দাঁড়িয়ে থাকা " ।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours