আফগানিস্তান থেকে ন্যাটো বাহিনী সরতে শুরু করার ১০০ দিনের মধ্যেই পতন হল কাবুলের। এর ফলে বিশ্ব জুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে আমেরিকার বাইডেন সরকার। মার্কিন প্রশাসন আন্দাজ করেছিল, ন্যাটো সরে আসার পরে আফগানিস্তানে তালিবান আরও সক্রিয় হয়ে উঠবে। কিন্তু এত দ্রুত তারা রাজধানী অবধি চলে আসবে ভাবতে পারেনি। আপাতত জানা গিয়েছে, আমেরিকার মদতে যিনি আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, সেই আশরাফ গনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তালিবান ঘোষণা করেছে, দেশের নতুন নাম হবে আফগানিস্তানের ইসলামি আমিরশাহি। সোমবার কয়েক ডজন দেশ বিবৃতি দিয়ে বলেছে, যারা আফগানিস্তানে ক্ষমতায় এসেছে, তারা যেন বিদেশিদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে দেয়। সীমান্ত যেন খোলা থাকে। আল জাজিরা টিভিতে দেখা গিয়েছে, কাবুলে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে ঘুরে বেড়াচ্ছে সশস্ত্র তালিবান জঙ্গিরা। মার্কিন নাগরিকরা বিমানে আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। সোমবার পেন্টাগন ও আমেরিকার বিদেশ দফতর থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আফগানিস্তান থেকে প্রত্যেক মার্কিন নাগরিককে ফিরিয়ে আনা হবে। তাঁদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে ৬ হাজার মার্কিন সেনা। দুই দশক ধরে চলা আফগান যুদ্ধে আমেরিকা খরচ করেছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। নিহত হয়েছেন প্রায় আড়াই হাজার মার্কিন সেনা। আহত হয়েছেন ২০ হাজারের বেশি। ৬৪ হাজার আফগান সেনা ও পুলিশ মারা গিয়েছেন। ১ লক্ষ ১১ হাজার নিরীহ মানুষ মারা গিয়েছেন। এর পরে যেভাবে তালিবান ফের কাবুল দখল করে নিয়েছে, তাকে আমেরিকার পরাজয় বলেই দেখছেন অনেকে। ২০০১ সালে ন্যাটো বাহিনীর আক্রমণে তালিবান কাবুল থেকে পালাতে বাধ্য হয়। তখন টিভিতে দেখা গিয়েছিল, তালিবানের হাত থেকে রেহাই পেয়ে অনেক আফগান আনন্দ করছেন। কিন্তু বাস্তবে কখনই তালিবানকে পুরোপুরি পরাস্ত করতে পারেনি আমেরিকা। কাবুল এবং অন্যান্য বড় শহর তালিবানের হাতছাড়া হয়েছিল ঠিকই কিন্তু আফগানিস্তানের দক্ষিণের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এবং উত্তরে হেলমন্দ, কান্দাহার, উরুজগান ও জাবুল প্রদেশে ছিল তাদের শক্ত ঘাঁটি। সেখানে তারা প্রতি মাসে মার্কিন বাহিনীর ওপরে হামলা চালাত। ২০১৭ সালের একটি বিদেশি সংবাদ মাধ্যমের সমীক্ষায় জানা যায়, আফগানিস্তানের বেশ কয়েকটি জেলা তালিবানের দখলে রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি জেলায় আফিমের চাষ হয়। মাদক বিক্রি করে কোটি কোটি ডলার রোজগার হয় তালিবানের। আমেরিকার মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ আসিম ইউসুফজাই বলেছেন, মার্কিন সেনা মূলত আফগানিস্তানের শহরগুলি দখলে রাখার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তালিবান শক্তিবৃদ্ধি করছিল গ্রামাঞ্চলে। ২০১৯ সালে 'ওয়াশিংটন পোস্ট' সংবাদপত্রে ক্রেগ হুইটলক নামে এক সাংবাদিক লিখেছিলেন, মার্কিন প্রশাসন মুখে বলছে, আফগানিস্তানে শীঘ্রই তালিবান পরাজিত হবে। কিন্তু বাস্তবে প্রশাসনের কর্তারা জানেন, একথা সত্যি নয়।

Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours