গত রবিবার জানা যায়, তালিবান আক্রমণের মুখে কাবুল ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি। তারপরে গুজব ছড়ায়, আফগানিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন তালিবান কম্যান্ডার মোল্লা আবদুল গনি বরাদর। আপাতত সেখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তৈরি হবে। তার শীর্ষে থাকবেন আলি আহমেদ জালালি নামে এক রাজনীতিক। পরে তিনি মোল্লা আবদুল গনি বরাদরের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন। তালিবানের কাবুল দখলের পরেই মোল্লা আবদুল গনি বরাদর কয়েকজন প্রতিনিধিকে নিয়ে বিদায়ী আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। প্রেসিডেন্ট প্যালেসে হওয়া ওই বৈঠকে ক্ষমতার হস্তান্তর নিয়ে কথা হয়। মোল্লা বরাদরকে আগে আফগানিস্তানের বাইরে বেশি লোক চিনতেন না। কিন্তু আচমকা তিনি চলে এসেছেন সংবাদ শীর্ষে। পাশ্চাত্যের সংবাদপত্রগুলি বলছে, আফগানিস্তানে ২০ বছরের যুদ্ধে কেউ যদি সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়ে থাকেন, তিনি হলেন মোল্লা বরাদর। তালিবানের সংগঠন মূলত পাশতুন জাতির লোকজনকে নিয়ে গঠিত। মোল্লা বরাদরও সেই জাতির মানুষ। তিনি পোপালজাই উপজাতির সদস্য। আফগানিস্তানের আর এক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইও ওই উপজাতির সদস্য ছিলেন। ইন্টারপোল জানিয়েছে, ১৯৬৮ সালে উরুজগান প্রদেশের দেহরাউদ জেলায় উইতমাক গ্রামে তাঁর জন্ম হয়। একসময় তিনি গ্রামে ছাগল চরাতেন। আটের দশকে সোভিয়েত সেনার বিরুদ্ধে তথাকথিত জেহাদে যোগ দেন। ১৯৯৪ সালে যে চারজন তালিবান নামে একটি জঙ্গি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, মোল্লা বরাদর তাঁদের অন্যতম। বরাদরের সঙ্গী ছিলেন মোল্লা ওমর। যুদ্ধ চলাকালীনই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মোল্লা ওমরের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল মোল্লা বরাদরের। মোল্লা ওমরের বোনকে তিনি বিবাহ করেছিলেন। ২০০১ সালে আমেরিকা আক্রমণ করার সময় মোল্লা বরাদর ছিলেন তালিবানের উপ প্রতিরক্ষামন্ত্রী। মার্কিন অভিযান মোকাবিলায় তালিবানকে পরিচালনা করা ছিল তাঁর কাজ। একসময় আফগানিস্তানে তালিবানের প্রতিটি হামলার পিছনে ছিল মোল্লা বরাদরের ছক। এছাড়া আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপরে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তিনি তালিবানের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতেন। অন্যান্য তালিবান নেতার মতো একসময় মোল্লা বরাদরের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ। তাঁর বিদেশের সম্পত্তি ফ্রিজ করে দেওয়া হয়। তাঁর বিদেশ ভ্রমণের ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তাঁকে অস্ত্র বিক্রি করাও নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তানের করাচি শহরে তিনি ধরা পড়েন। তখন তালিবান সংগঠনে তাঁর স্থান ছিল মোল্লা ওমরের পরেই। তাঁকে মুক্ত করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেছিল তালিবান। হুমকি দিয়েছিল, তাঁকে বন্দি করে রাখলে আক্রমণ আরও তীব্র হবে। ২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর একটি শর্তে মোল্লা বরাদরকে মুক্তি দেয় পাকিস্তান। শর্ত ছিল, তিনি আফগান সরকার ও তালিবানের মধ্যে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা চালাবেন। একটি সূত্রে জানা যায়, মোল্লা বেরাদর আমেরিকার সঙ্গেও আলোচনা চালাতে আগ্রহী ছিলেন। মে মাসে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরতে শুরু করার পরেই চিনে গিয়েছিলেন মোল্লা বরাদর। চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে তাঁর কথা হয়। তার আগে রাশিয়াতেও গিয়েছিলেন তিনি। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, চিন ও রাশিয়ার সমর্থনেই তিনি আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট পদে বসতে পারেন।

Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours