ন'য়ের দশকের শেষদিকে দেখা যেত, জীর্ণ, মলিন পোশাক পরে রয়েছে তালিবান যোদ্ধারা। তাদের অস্ত্রশস্ত্রও পুরানো ধাঁচের। কিন্তু এখন টিভিতে দেখা যাচ্ছে, জঙ্গিদের হাতে ব্রান্ড নিউ অস্ত্রশস্ত্র। তাদের হামভি বা ওই ধরনের গাড়িগুলোও নতুন। যোদ্ধাদের ইউনিফর্মও নতুন।
বোঝা যাচ্ছে, বিপুল অর্থের মালিক হয়েছে তালিবান। ২০১৬ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বে যত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আছে, তার মধ্যে সম্পদের নিরিখে তালিবানের স্থান পঞ্চম। আইসিস বছরে ২০০ কোটি ডলার পায়। ভারতীয় মুদ্রায় তার পরিমাণ ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। তালিবান বছরে পায় ৪০ কোটি ডলার। অর্থাত্ প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। ফোর্বসের মতে, তালিবানের অর্থের প্রধান উত্স মাদক পাচার। তাছাড়া তারা তোলাবাজি করে বিপুল অঙ্কের অর্থের মালিক হয়েছে। বিদেশ থেকেও অনেকে তাদের অনুদান দেয়। ন্যাটোর এক গোপন রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ২০১৯-২০ সালের আর্থিক বছরে তালিবানের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৬০ কোটি ডলার। অর্থাত্ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। তার আগের চার বছরে তাদের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছিল ৪০০ শতাংশ। ন্যাটোর হিসাব অনুযায়ী, খনি থেকে বছরে তালিবান পায় ৪৬ কোটি ৪০ লক্ষ ডলার। মাদক পাচার করে পায় ৪১ লক্ষ ৬০ হাজার ডলার। বিদেশি অনুদান পায় ২৪ কোটি ডলার। তোলাবাজি করে পায় ১৬ কোটি ডলার।
জমি-বাড়ি কেনাবেচার মাধ্যমে পায় ৮ কোটি ডলার। ন্যাটোর গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, তালিবান নেতৃত্ব চায়, বিদেশি অনুদানের ওপরে নির্ভরতা কমাতে। ২০১৭-১৮ সালে তারা বিদেশ থেকে পেয়েছিল ৫০ কোটি ডলার। তখন তাদের বাত্সরিক খরচের অর্ধেক আসত বিদেশ থেকে। কিন্তু এখন তাদের বাত্সরিক খরচের ১৫ শতাংশ বিদেশ থেকে আসে। অর্থাত্ দেশের অভ্যন্তরেই নানা ব্যবসা থেকে তারা বিপুল অর্থ পেয়ে থাকে। দুই দশক ধরে চলা আফগান যুদ্ধে আমেরিকা খরচ করেছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। নিহত হয়েছেন প্রায় আড়াই হাজার মার্কিন সেনা। আহত হয়েছেন ২০ হাজারের বেশি। ৬৪ হাজার আফগান সেনা ও পুলিশ মারা গিয়েছেন। ১ লক্ষ ১১ হাজার নিরীহ মানুষ মারা গিয়েছেন।
২০০১ সালে ন্যাটো বাহিনীর আক্রমণে তালিবান কাবুল থেকে পালাতে বাধ্য হয়। তখন টিভিতে দেখা গিয়েছিল, তালিবানের হাত থেকে রেহাই পেয়ে অনেক আফগান আনন্দ করছেন। কিন্তু বাস্তবে কখনই তালিবানকে পুরোপুরি পরাস্ত করতে পারেনি আমেরিকা। কাবুল এবং অন্যান্য বড় শহর তালিবানের হাতছাড়া হয়েছিল ঠিকই কিন্তু আফগানিস্তানের দক্ষিণের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এবং উত্তরে হেলমন্দ, কান্দাহার, উরুজগান ও জাবুল প্রদেশে ছিল তাদের শক্ত ঘাঁটি। সেখানে তারা প্রতি মাসে মার্কিন বাহিনীর ওপরে হামলা চালাত।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours