উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম স্থানাধিকারির পরিচয় দিতে গিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রীর '‌মুসলিম কন্যা'‌ মন্তব্য নিয়ে নিন্দার ঝড় শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে।‌ উচ্চমাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের বৈঠকে পরীক্ষার্থীকে কয়েকবার '‌মুসলিম কন্যা'‌ বলে সম্বোধন করেছেন সভানেত্রী মহুয়া দাস। ওই মেয়েটির জায়গায় কোনও হিন্দু পরীক্ষার্থী থাকলে কী তাঁকে '‌হিন্দু কন্যা'‌ বলে সম্বোধন করা হত, এই প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

সেইসঙ্গে অনেকেই পর্ষদের সাংবাদিক বৈঠকের ভিডিও টুইট করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে, '‌এককভাবে পেয়েছে একটি মুসলিম কন্যা, মুসলিম, মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে একজন মুসলিম লেডি, গার্ল, তিনি এককভাবে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন।'‌ যা নিয়ে ইতিমধ্যেই জলঘোলা শুরু হয়েছে।

বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, উচ্চ মাধ্যমিকে কৃতী ছাত্রী হিসেবে রুমানার মেধাই কি যথেষ্ট নয়? তাহলে বারবার রুমনার ধর্মীয় পরিচয়ের কথা কেন উল্লেখ করলেন সংসদ সভাপতি?

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী থেকে বামেদের কনীনিকা ঘোষ, এমনকী বিজেপিও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। ফলে আপতভাবে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক একটি বিষয়ই রাজনীতিকদের আলোচনার প্রসঙ্গ হয়ে উঠেছে। গোটা বিতর্ক নিয়ে সবচেয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী। ফেসবুকে একটি পোস্ট করে তিনি প্রশ্ন তুলে দেন, 'মুসলিম মেয়ে বলে কি কোনও অঘটন ঘটেছে?' তিনি আরও লেখেন, 'মুসলিম মহিলা প্রথম হয়েছে' বলে যারা বারবার বলছে, তাদের এত অবাক কেন হতে হচ্ছে! মেধা বুদ্ধি পরিশ্রম করে প্রথম হতে হয়।

কাউন্সিলের প্রেসে শ্রুতিকটু শুনতে লাগে যখন বলা হয় 'প্রথম হয়েছে মুসলমান মেয়ে'! ছাত্রীর নাম দেখে সে কোন ধর্মের বোঝানোর দায়িত্ব না নিলে খুশি হব। একজন ছাত্রী ফার্স্ট, ছেলেদের থেকে এগিয়ে চলেছে মেয়েরা - এটা লক্ষ্যণীয়।' বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন কাজি মাসুম আখতারের মতো পদ্মশ্রী প্রাপক শিক্ষকও। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, 'আজ সভাপতির ঘোষণায় মনে হল উচ্চ মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া ছাত্রীটির ধর্ম পরিচয়ই মূল যোগ্যতা!

মুসলিমদের বিপুল ভোটে জয়ী সরকারের উক্ত আধিকারিক কি কারও অঙ্গুলি হেলনে মুসলিমদের বিপুল উন্নয়ন বোঝাতে এই বিড়ম্বনা সৃষ্টি করলেন, নাকি মুসলিমদের মর্যাদার দৈন্যদশা বোঝাতে এমনটাই দস্তুর!' তবে বিজেপির দাবি এটাই আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখানো পথে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রীর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। মুসলিম পড়ুয়ারা এর আগেও রাজ্যে মেধা তালিকায় প্রথম সারিতে এসেছেন। তখন কিন্তু ধর্মের উল্লেখ দেখা যায়নি। এর ফলে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনৈতিক বিভাজন বাংলাকে বিপজ্জনক জায়গায় নিয়ে যাবে বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours