একদিকে জেটগতিতে ছুটতে থাকা জগত্, অন্যদিকে মধ্যযুগীয় কুসংস্কার! চমকে দেওয়ার মতো ঘটনাক্রম গোসাবায়। সাপে কাটা বালিকাকে হাসপাতালে নিয়ে না ছুটে প্রথমে যাওয়া হয় ওঝার কাছে। তাঁর ঝাড়ফুঁকের মাঝে দীর্ঘ অমূল্য সময় নষ্টের পর বেগতিক বুঝে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছুটলেও ততক্ষণে সব শেষ। তবে এখানেই শেষ নয়! কলার ভেলায় ভাসিয়ে দিলে প্রাণ ফিরবে মেয়ের এই অন্ধবিশ্বাসে ভর করে সারসা নদীতে মৃতদেহ ভাসিয়ে দিল পরিবার! শেষমেশ খবর পেয়ে দেহ উদ্ধার করে সত্কারের ব্যবস্থা করলেন স্থানীয় বিডিও। ঘটনার কথা শুনে চমকে ওঠা যুক্তিবাদীরা বলছেন, মধ্যযুগীয় তুকতাক নয়, প্রাণ বাঁচে চিকিত্সায়।
চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা গোসাবা ব্লকের ছোট মোল্লাখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫ নম্বর কালিদাসপুর গ্রামে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রাতে বাবার সাথে ঘুমিয়েছিল বাচ্চা মেয়েটি। সেই সময় তার পায়ে সাপে কামড়ায়। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা ছোট্ট মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে না ছুটে স্থানীয় ওঝার কাছে নিয়ে যায় তার পরিবার। সেখানে প্রায় তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে ঝাড়ফুঁক-তুকতাক। যদিও মেয়েকে ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পড়তে দেখে পরিবারের লোক তাকে নিয়ে ছোটে স্থানীয় ছোট মোল্লাখালি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। চিকিত্সকরা জানিয়ে দেন, হাসপাতালে আনতে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। নাবালিকার দেহে আর প্রাণ নেই।
তবে অন্ধবিশ্বাসের এখানেই শেষ নয়। নদীতে ভাসিয়ে দিলে প্রাণ ফিরবে মেয়ের, এই কুসংস্কারের জেরে স্থানীয় সারসা নদীতে কলার ভেলা করে মৃতদেহ ভাসিয়ে দেন পরিবারের লোকজন। যে খবর জানাজানি হতেই ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন। মৃতদেহ উদ্ধার করে সত্কারের ব্যবস্থা করেন বিডিও। গোসাবার বিডিও সৌরভ মিত্র বলেছেন, 'আমরা শোনার পর নির্দেশ দিই, দেহ উদ্ধার করা সত্কার করা হয়েছে, সাপের কামড় নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে সচেতন করা হবে।' এদিকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের চিকিত্সক তথা বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্য সমরেন্দ্র রায় বলেছেন, 'আজও এমন কুসংস্কার, ভাবতে অবাক লাগে, সচেতন করা হবে।'
Post A Comment:
0 comments so far,add yours