‘অমিত শাহকে কন্ট্রোল করুন’, সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে বললেন মমতা
সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হচ্ছেন বিআর গভাই, কতদিন মেয়াদ তাঁর?
ইউনূসের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করছেন করুন, তবে আপনাদের প্ল্যানিংটা ঠিক কী?’, মমতার নিশানায় কেন্দ্র
উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানে হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসকে খুনের ঘটনায় মঙ্গলবাই সিট গঠন হয়েছিল। সিআইডি (CID), এসটিএফ (STF) -এর অফিসারদের নিয়ে সিট অর্থাৎ বিশেষ তদন্তকারী দল গঠিত হয়েছিল।
এটা একেবারেই কাম্য নয়’, ওয়াকফ ঘিরে বাংলার অশান্তিতে উদ্বেগ প্রকাশ প্রধান বিচারপতির
প্রহর:- সোহম দাস
যে আক্ষেপের কথা বললাম, সে আক্ষেপ অভিনয় জগতের এক তীব্র অবিচারের পরিচায়ক। শিল্পীর সঠিক মূল্যায়ণ না করতে পারার এই চিরাচরিত ধারাটির জন্ম এক ও একমাত্র কারণ হল, পপুলার সেন্টিমেন্টকে অতি-মান্যতা দেওয়ার সীমাবদ্ধতা। এ এক অসুস্থ অভ্যাস, নতুন ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। আর আমাদের দেশে, অন্ততপক্ষে বাংলা ছবির জগতে এই দৃষ্টিকোণ থেকে সবচেয়ে দুর্ভাগা হলেন কমেডিয়ানরা। তুলসী চক্রবর্তী থেকে শুরু করে নৃপতি চট্টোপাধ্যায়, নবদ্বীপ হালদার, কি পরবর্তীকালে ভানু-জহর কিংবা অনুপ-রবি-চিন্ময়ের, ট্র্যাডিশন সমানেই চলিয়াছে। অবশ্য কমিকের খোলস ছেড়ে বেরোনোর ফলে খোদ চ্যাপলিনকেই যেভাবে একের পর এক ছবিকে বক্স অফিসে ফ্লপ করতে দেখতে হয়েছিল, তাতে আর এদেশের দর্শককে শুধু ‘বোধহীন’ আখ্যা দিয়ে লাভ কী!
অনুপকুমারের বাবা ধীরেন দাস ছিলেন থিয়েটারের সুরস্রষ্টা। তাঁর অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। দুই পরিবারের মধ্যে আড্ডা থেকে শুরু করে ক্রিকেট খেলা, সবই চলত নিয়মিত। গানের মানুষ হলেও ধীরেন দাসের মূল আগ্রহ ছিল অভিনয়ে। তাই একেবারে শিশু বয়সেই মেজ ছেলে সত্যেনের অভিনয়ে প্রবেশকে তিনি সানন্দে স্বাগত জানিয়েছিলেন। মনে রাখতে হবে, সেই সময়ে থিয়েটার বা চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ জন্য পরবর্তীকালের বহু নামকরা শিল্পীকেই যেখানে কিনা শুনতে হয়েছিল ‘কুলাঙ্গার’ বদনাম, সেখানে স্কুলপড়ুয়া পুত্রের অভিনয়-গ্রহণকে এমন সাদরে অভ্যর্থনা জানানো বিস্ময়কর তো বটেই, সেইসঙ্গে মানুষটির শিল্প-অনুরাগকেও পরিষ্কার ফুটিয়ে তোলে।
১৯৪৬ সালের আগস্ট মাস। কলকাতার রাজপথ সেদিন দাঙ্গার রক্তে লাল। কিছুদিন আগেই মুক্তি পেয়েছে অর্ধেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘সংগ্রাম’। সেই থেকে নিয়মিতভাবে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো শুরু অনুপকুমারের। তার দু’বছর পরেই পেলেন নায়কের ভূমিকা। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনি নিয়ে তৈরি কালীপ্রসাদ ঘোষ-পরিচালিত ‘ধাত্রীদেবতা’ ছবিতে। আদ্যন্ত সিরিয়াস চরিত্র। আবার অগ্রদূতের ‘সঙ্কল্প’-এ একটি ট্র্যাজিক চরিত্র। কিন্তু পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিক থেকে পরপর ছবিতে আস্তে আস্তে তাঁকে দিয়ে যে কমেডি অ্যাক্টিং করানো শুরু করলেন পরিচালকরা, সেই টাইপকাস্ট আবর্ত থেকে বেরোতে না পারার আক্ষেপই সারাজীবন তাড়া করে ফিরেছিল তাঁকে।
বাংলা, হিন্দি, ওড়িয়া মিলিয়ে যে তিনশো ষাটখানা ছবি তিনি করেছেন, তার মধ্যে প্রথম দিকের ছবিগুলির পরে ‘অন্য ধরনের’ চরিত্র তিনি পেয়েছেন খুব কম ছবিতেই। যাত্রিকের (তরুণ মজুমদার, শচীন মুখোপাধ্যায় ও দিলীপ মুখোপাধ্যায়ের ত্রয়ী পরিচালনা) ‘পলাতক’-এর জীবনপুরের পথিকের নামই এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে আসবে। সে লোকটা স্বভাবগতভাবেই বৈরাগী, সংসারের বাঁধন তাকে বেঁধে রাখতে পারে না। তরুণ মজুমদারের পরের ছবি ‘আলোর পিপাসা’-য় আবার তিনি বেশ্যালয়ের দালাল সুখনলাল। সামান্যই পরিসর, কিন্তু সেখানে নবাবি আমলের পোশাকের সঙ্গে মানানসই সুর্মা টানা চোখ নাচিয়ে ডায়লগ থ্রোয়িং, বিপন্ন রোশনকে (সন্ধ্যা রায়) ‘মুঝে ভুল না যাইয়ো, বিবিজান’ বলতে বলতে ক্রুর হাসি হেসে সে দাঁতের ফাঁকে চুন লাগিয়ে নেয়। রাজেন তরফদারের ‘জীবনকাহিনী’ ছবিতে আবার এক আত্মহত্যাপ্রবণ তরুণ থেকে জীবনমুখী মানুষ। তবে তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনয় ছিল দিলীপ রায় পরিচালিত অনসম্বল কাস্টের ছবি ‘অমৃত কুম্ভের সন্ধানে’-তে। প্রতিবন্ধী বৈষ্ণব পুণ্যার্থীর ভূমিকায় অভিনয় করছেন তিনি। পা ছোটো হওয়ায় পড়ে যাওয়ার ভয়ে গিয়ে তিনি ট্রেনের সিটে শুতে পারেন না, শুয়ে থাকেন নিচে। স্ত্রীর প্রতি অসম্ভব ভালবাসা। শখ শুধু তীর্থস্নানের পুণ্যলাভ। কিন্তু সেই পুণ্যলাভেই লুকিয়ে থাকা তাঁর নিয়তি।
কিন্তু একটি ব্যাপার লক্ষণীয়, কমেডিয়ানের ‘অভিশাপ’ থেকে বেরোতে চাইলেও এই চরিত্রগুলিতেও নিজের মতো কমিক এলিমেন্ট তিনি যুক্ত করেছেন। আসলে সফল কমেডিয়ান হতে গেলে সহজাত ক্ষমতা যে একান্ত কাম্য, তা যেকোনো বিশেষজ্ঞই স্বীকার করবেন। পরিশ্রমের দ্বারা অভিনয় সুচারু হতে পারে, কিন্তু হাস্যরসের সৃষ্টির জন্য বোধের প্রয়োজন আবশ্যিক। তাঁকে যাঁরা কাছ থেকে দেখেছেন, সকলেই বলতেন, আসলে মানুষটি নিজেও ছিলেন সহজাত প্রত্যুৎপন্নমতি রসিক। এই প্রসঙ্গে তাঁর একটি গুণের (অথবা দোষ) কথা উল্লেখ করতেই হয়।
সেইসময়ের অনেক মঞ্চাভিনেতাদের মতো অনুপকুমারেরও অভ্যাস ছিল, মঞ্চে যথেচ্ছ এক্সটেম্পো করার। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা রীতিমতো বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যেত। তবে অনুপকুমারের একেবারে নিজস্ব যে এক্সটেম্পোর স্টাইল ছিল, তাতে অন্যতম ছিল সামাজিক নাটকে চেনা মানুষের নাম হুট করে বলে দেওয়া। দর্শকাসনে হয়তো বসে আছেন চলচ্চিত্র জগতের কোনো ব্যক্তি, তাঁকে দেখতে পেয়ে বলে দিলেন তাঁর নাম। সহ-অভিনেতার এতে অসুবিধা হত ঠিকই, তবে অনুপ সেসবের ধার ধারতেন না। চিত্রগ্রাহক সৌম্যেন্দু রায় থেকে অভিনেত্রী লিলি চক্রবর্তী, সকলেই তাঁর এই এক্সটেম্পোর ‘শিকার’ হয়েছেন।
তবে এই অভ্যাসের সর্বোৎকৃষ্ট স্ফুরণটি ঘটিয়েছিলেন ‘বেগম মেরি বিশ্বাস’ নাটকে। নাটকটি অভিনীত হত বিশ্বরূপা মঞ্চে। একদিন সেই নাটকে অতিথি হয়ে এসেছেন আরও তিন নাট্যকুশলী নীলিমা দাস, সতীন্দ্র ভট্টাচার্য্য (ডাকনাম ছিল বুলবুল) এবং প্রেমাংশু বসু। সেদিন স্টারে তাঁদের ‘দাবী’ নাটকটি যান্ত্রিক গোলযোগে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা এসেছিলেন ‘বেগম মেরি বিশ্বাস’ দেখতে। দৃশ্য শুরুর আগে প্রেমাংশু হঠাৎ অনুপকুমারকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বসেন এই বলে যে, আজ অনুপকুমার কিছুতেই এই তিনজনের নাম দিয়ে ডায়লগ বলতে পারবেন না, কারণ সিরাজদৌলার সময়ের কাহিনির সঙ্গে একালকে কোনোভাবেই মেলানো যাবে না। উমিচাঁদ-বেশী অনুপকুমার চ্যালেঞ্জটা নিলেন এবং মঞ্চে গিয়ে তাঁর প্রথম সংলাপটিই ছিল – ‘আহা আহা, নীলিমায় নীল প্রেমাংশু কিরণে বুলবুল পাখি ডাকিতেছে – আহা!’
হাস্যরসকে যিনি এমনভাবে আত্মিকরণ করেছিলেন, তাঁকে দর্শক পর্দায় কমিক চরিত্রে যে দেখতে চাইবেই, এ আর আশ্চর্যের কী! তিনি আক্ষেপ করতে পারেন, কিন্তু মরবিড সমাজের ক্লান্ত দর্শককেই বা দোষ দেওয়ার জায়গা সেভাবে থাকে কি?
Post A Comment:
0 comments so far,add yours