পূর্ব মেদিনীপুর, দুই চব্বিশ পরগণা তো বটেই, গত বছর এই মে মাসেই ঘূর্ণিঝড় আমফানের দাপটে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল কলকাতা৷ ফিরিয়ে এনেছিল ২০০৯ সালের মে মাসের আর এক বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আয়লার স্মৃতি৷ এবার ইয়াসকে নিয়েও একই আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল বাংলায়৷ যদিও আলিপুর আবহাওয়া দফতরের যা পূর্বাভাস, তাতে সম্ভবত দুই চব্বিশ পরগণা বা কলকাতায় আমফানের মতো প্রলয় চালাবে না ইয়াস৷ তবে প্রস্তুতিতে কোনও ফাঁক রাখছে না রাজ্য প্রশাসন৷
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, আয়লা, আমফানের সঙ্গে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে ইয়াসের৷ আয়লা এবং আমফান দু'টি সরাসরি এ রাজ্যে আঘাত হেনেছিল৷ কিন্তু ইয়াস আছড়ে পড়তে চলেছে ওড়িশার বালাসোরের কাছে৷ ফলে ওড়িশা লাগোয়া পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ইয়াস বিধ্বংসী রূপ নিলেও রাজ্যের বাকি অংশে তা আয়লা, আমফানের মতোই ধ্বংসলীলা চালাবে না বলেই আশাবাদী আবহবিদরা৷ পূর্ব মেদিনীপুরে অবশ্য ইয়াসের সর্বোচ্চ গতি হতে পারে ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার৷ কিন্তু দুই চব্বিশ পরগণা, কলকাতা, হাওড়া এবং হুগলির মতো জেলাগুলিতে তার সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার৷ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের আরও ভিতরের জেলাগুলিতে আরও কম থাকবে ঝড়ের গতিবেগ৷
সঞ্জীববাবু বলেন, 'গতি দিয়ে পুরোটার বিচার হয়না৷ আয়লা, আমফান সরাসরি আমাদের রাজ্যে আঘাত এনেছিল৷ সেখান ইয়াস ওড়িশা হয়ে এ রাজ্যে ঢুকবে৷ আয়লার ক্ষেত্রে পুরোটা আমাদের রাজ্যের উপর দিয়ে গিয়েছিল৷ আমফানের ক্ষেত্রেও আমরা যদি দেখি সাগরের কাছে আছড়ে পরার পর কলকাতা, উত্তর চব্বিশ পরগণা হয়ে তা বাংলাদেশের দিকে চলে গিয়েছিল৷ বলা যায়, কলকাতার বুক চিড়ে চলে গিয়েছিল আমফান৷ আর ইয়াস সেখানে চলে যাবে ঝাড়খণ্ডের উপরের দিকে৷ ফলে ঝাড়খণ্ডেও কিছুটা দুর্যোগ হবে৷'
সঞ্জীববাবু আরও বলেন, ওড়িশার বালাসোরে যেখানে ইয়াসের আঘাত হানার কথা, সেখান থেকে দিঘার দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার৷ দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার সাগরের দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার৷ আর কলকাতার দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার৷ ফলে কলকাতা বা দুই চব্বিশ পরগণায় ইয়াসের দাপট অনেকটাই কম হবে বলেই মত আবহবিদদের৷
তবে ইয়াসের দাপটে এ দিন থেকেই পূর্ব মেদিনীপুর, দুই চব্বিশ পরগণা, কলকাতা. হাওড়ায় বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে৷ বৃষ্টি হয়েছে আরও কয়েকটি জেলায়৷ মঙ্গলবার এবং বুধবার দুই চব্বিশ পরগণা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর৷
হাওয়া অফিসের তরফে এ দিন জানানো হয়েছে, আগামী বুধবার দুপুরের দিকে ওড়িশার বালাসোরের কাছাকাছি স্থলভাগে প্রথম আঘাত হানবে ইয়াস৷ বালাসোরের সঙ্গে ভদ্রক, কেন্দুপাড়া, জগৎসিংহপুরে প্রভূত ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে৷ একই ধরনের আশঙ্কা রয়েছে এ রাজ্যের পূর্ব মেদিনীপুরকে নিয়ে৷ কারণ এই সমস্ত জায়গাতেই ইয়াস আছড়ে পড়ার সময় হাওয়ার গতিবেগ থাকতে ঘণ্টায় ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটারের মধ্যে৷ যা সর্বোচ্চ ১৮৫ কিলোমিটারে পৌঁছতে পারে৷
আবহবিদদরা জানিয়েছেন, ইয়াসের দাপটে পূর্ব মেদিনীপুরে সমুদ্রে ২ থেকে ৪ মিটার জলস্ফিতি ঘটতে পারে৷ দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায় তা থাকবে ১ থেকে ২ মিটারের মধ্যে৷
যদিও রাজ্য প্রশাসনের তরফে ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতিতে কোনওরকম ফাঁক রাখা হচ্ছে না৷ উপকূলবর্তী এলাকাগুলি থেকে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ গোটা পরিস্থিতির উপরে নিজে নজর রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কলকাতাতেও সবরকম সতর্কতা নিচ্ছে কলকাতা পুরসভা৷
Post A Comment:
0 comments so far,add yours