মনে রাখবেন, মেনোপজের পর আপনি স্রেফ প্রজননক্ষমতা হারাবেন -তার মানে জীবনের গতি স্তব্ধ হয়ে যাওয়া নয় কিন্তু! সাধারণত ৪০ বছরের আশেপাশে এলেই মেয়েদের শরীরে মেনোপজের কিছু লক্ষণ ফুটে উঠতে থাকে। যাকে বলা হয় পেরিমেনোপজ।
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: মেনোপজ আর কিছুই নয়, একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যা প্রত্যেক মহিলার জীবনেই আসবে। মেনোপজ মানেই বুড়িয়ে যাওয়া নয়। মেনোপজ হতে হতে ৪৮ থেকে ৫০।তার আগে সাধারণত ৪০ বছরের আশেপাশে এলেই মেয়েদের শরীরে মেনোপজের কিছু লক্ষণ ফুটে উঠতে থাকে। যাকে বলা হয় পেরিমেনোপজ। চিকিৎসাবিজ্ঞান এই একটা ব্যাপারে মোটামুটিভাবে একমত যে মেনোপজ বা পেরিমেনোপজ কবে হবে বা কতদিন পর্যন্ত চলবে, তা বংশগতির ধারার উপর নির্ভর করে। তবে আপনি যদি খুব ফিট হন, তা হলে প্রক্রিয়াটি খানিক পিছিয়ে দেওয়া সম্ভব। উলটোদিকে আবার যাঁরা আনফিট বা হরমোনের সমস্যা আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঘটতে পারে সময়ের আগেই।অনেক মহিলাই আছেন, যাদের মেনোপজের সময় এগিয়ে আসছে এবং এটা নিয়ে তাদের মধ্যে একটা চাপা আতঙ্ক বা দুশ্চিন্তা কাজ করে। অনেকে আবার এটা নিয়ে কুসংস্কারে ভোগেন। এই সময়টা সব মহিলাকেই ফেস করতে হবে, তাই অহেতুক চিন্তা না করে, এই সময় কী কী হতে পারে এবং তার বিপরীতে কী কী করা যেতে পারে, সেগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে অনেক সহজ হয়ে যাবে। একজন মহিলার শরীরে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ডিম্বাণু থাকে। যেগুলো তাঁর জরায়ুতে সংরক্ষিত থাকে। জরায়ু মহিলাদের শরীরের ইসট্রোজেন এবং প্রজেসটেরন হরমোন তৈরি করে, যেটা প্রতিমাসের পিরিয়ড এবং ওভাল্যুশনকে নিয়ন্ত্রণ করে। যখন জরায়ু থেকে ডিম্বাণু নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায় এবং পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়, তখনই মেনোপজ হয়।পেরিমেনোপজের লক্ষণ -
পিরিয়ড কি অনিয়মিত হয়ে গিয়েছে?
অনিয়মিত পিরিয়ড বলতে আমরা অত্যধিক বেশি বা কম দু’ ধরনের স্রাবকেই বোঝাচ্ছি। কারও কারও মাসে একাধিকবার ব্লিডিং শুরু হয়ে যায়, কারও খুব কম ব্লিডিং হয়। কারও ক্ষেত্রে আবার তিন-চার মাস দেখাই মেলে না পিরিয়ডের। টানা ১২ মাস ঋতুস্রাব না হলে বুঝতে হবে যে আপনার ঋতুবন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে পিরিয়ড না হলে একবার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন এবং প্রেগন্যান্সি টেস্ট করিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনি গর্ভবতী নন। অতিরিক্ত রক্তপাত হলে কিন্তু শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে, তাই ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন নিয়মিত।
রাতে ঘাম হয়ে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে কী?
মাঝরাতে আচমকা ঘামে ভিজে ঘুম ভেঙে গেল, এমন কখনও হয়েছে কী? বা হঠাৎ করেই প্রবল গরমে কান, মাথা জ্বলতে আরম্ভ করে? এটাও পেরিমেনোপজের লক্ষণ এবং এটা মেনোপজের পরও চলতে পারে।ত্বক আর চুল ক্রমশ শুকনো হয়ে যাচ্ছে কী?
নিয়মিত যত্ন নেওয়ার পরেও যদি ত্বক আর চুলের স্বাস্থ্যের বিন্দুমাত্র উন্নতি না হয়, তা হলে বুঝতে হবে যে আপনার শরীরে স্ত্রী হরমোনের যে ঘাটতি হচ্ছে, তার কারণেই চুল যাচ্ছে শুকনো হয়ে। ত্বক হারাচ্ছে লালিত্য। আপনি নিয়মিত ব্যায়াম করতে আরম্ভ করুন, ফল পাবেন। হয়তো হরমোন তৈরি হবে না, কিন্তু ব্যায়ামের ফলে ত্বক-চুল ভালো থাকে, এ কথাও ঠিক। আর ব্যায়াম করলে কমবে ওজন বাড়ার হারও।
ভ্যাজাইনার শুষ্কতা ভোগাচ্ছে?
পেরিমেনোপজ স্তরে অনেকেই ভ্যাজাইনার আশপাশ শুকনো হয়ে গিয়েছে এমন অভিযোগ করেন। হয়তো যৌন মিলনের সময় অসুবিধে হতে পারে, সেক্ষেত্রে লুব্রিক্যান্ট ব্যবহার করতে হবে। তবে অনেকেই এই অসুবিধে টের পান না এবং মিলনের আনন্দ চুটিয়ে উপভোগ করেন, এ কথাও ঠিক।মুড বদলাচ্ছে ঘন ঘন?
মেনোপজের সময় বা তার আশপাশে যে মন খারাপের একটা সমস্যা হয়, এ কথা পরীক্ষিত ও প্রমাণিত। যদিও অনেকেই তার কিছুমাত্র টের পান না, তবু বহু মহিলা ডিপ্রেশনের শিকার হন। তাই মনের কোণে মেঘ জমছে মনে হলেই ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।
মনে রাখবেন, মেনোপজের পর আপনি স্রেফ প্রজননক্ষমতা হারাবেন -তার মানে জীবনের গতি স্তব্ধ হয়ে যাওয়া নয় কিন্তু! চুটিয়ে বাঁচুন, নিজের খেয়াল রাখুন, পেটে, কোমরে চর্বি জমতে দেবেন না, তাতে অন্য নানা জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours