বিশিষ্ট অধ্যাপিকা ও ইতিহাসের গবেষক অধ্যাপিকা উত্তরা চক্রবর্তী প্রয়াত। কলকাতা শহরের ইতিহাস নিয়ে তাঁর অসংখ্য লেখা আছে। তাঁর ইতিহাস চর্চায় গুরুত্ব পেয়েছে মুসলিম নারী।
ডিজিটাল ডেস্ক: যে ধরনের শিক্ষকের জন্য লেখাপড়ার শহর হিসেবে কলকাতার পরিচিতি তেমনই এক শিক্ষককে হারিয়ে দরিদ্র হল এই শহর। তিনি অধ্যাপিকা উত্তরা চক্রবর্তী। রবিবার শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
অধ্যাপিকা উত্তরা চক্রবর্তীর জন্ম ১৯৪৪ সালে। বেথুন কলেজের অধ্যাপিকা হিসেবেই তাঁর বেশি পরিচিতি, তবে পড়িয়েছেন লেডি ব্রেবোর্ন কলেজেও।সরকারি কলেজে অধ্যাপনার কাজে যোগ দেওয়ার আগে অধ্যাপনা করেছেন দার্জিলিংয়ের লোরেটো কলেজে। সেখানেই তাঁর অধ্যাপনার সূচনা। অবসরের পর পড়িয়েছেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়েও। প্রেসিডেন্সি কলেজেই তাঁর পড়াশোনা। স্কুলশিক্ষা সেন্ট জন ডায়াসেশন স্কুলে।
ইতিহাসের অধ্যাপিকা উত্তরা চক্রবর্তীর বিশিষ্টতা তাঁর ছাত্রদরদে। ছাত্রদের প্রিয় এই অধ্যাপিকার পড়ানো আর গবেষণার উদ্দেশ্যই বোধহয় ছিল ভাবী প্রজন্মকে ইতিহাসপাঠ আর গবেষণায় আগ্রহী করে তোলা।তাঁর নিজের আগ্রহের ক্ষেত্র ছিল বিস্তৃত। শহরের ইতিহাস, বিশেষ করে কলকাতার ইতিহাসচর্চা ছিল তাঁর পড়াশোনার এক বড় জায়গা জুড়ে। কলকাতার আদিপর্ব, সুতানুটি, গোবিন্দপুর, শহরের বণিক, শেঠ বসাক, শিমলা বাজার প্রভৃতি বিষয় নিয়ে লিখেছেন তিনি।
শুধু 'শহর কলকাতার উপাখ্যান' রচনা করেননি তিনি, চর্চা করেছেন নারী ইতিহাস। মেয়েদের কলেজে পড়ানোর অভিজ্ঞতা হয়তো তাঁকে প্ররোচিত করেছে উচ্চশিক্ষায় নারীর ইতিহাস অনুসন্ধানে। সেই লক্ষ্যে সম্পাদনা করেছেন উইমেন্স এডুকেশন এন্ড পলিটিকস্ অব জেন্ডার, ইন দ্য ফুটস্টেপস অব চন্দ্রমুখী, বেথুন কলেজের ১২৫ বছরের স্মারক গ্রন্থ। দেশের আর এক ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিক সোসাইটির ২২৫ বছর উপলক্ষে প্রকাশিত স্মারকগ্রন্থ 'টাইম পাস্ট এন্ড টাইম প্রেজেন্ট'-এর সম্পাদনার কাজও করেছেন তিনি। আবার বেথুন কলেজে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের সঙ্গে যুক্ত থেকে ইন্ডিয়ান আর্কিয়োলজিক্যাল সোসাইটির বুলেটিন পুরাবৃত্ত-এ লিখেছেন 'আর্কিয়োলজি অব ক্যালকাটা: এভিডেন্স ফ্রম বেথুন কলেজ'। তাঁর মানবীবিদ্যাচর্চায় গুরুত্ব পেয়েছে মুসলিম নারী; লিখেছেন রোকেয়াকে নিয়ে।
মধ্যযুগের ভারত ছিল তাঁর অধ্যাপনা আর অধ্যয়নের আর এক আগ্রহের জায়গা। পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদের ২০০৫ সালের অধিবেশনে মধ্যযুগের ভারত বিভাগে সভাপতিত্ব করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন 'নদী বসতির পটভূমি ও শহর' নিয়ে। নব্বইয়ের দশকে বিজ্ঞানের ইতিহাসচর্চার গোড়ার যুগে লিখেছেন সুলতানি আমলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চর্চা নিয়ে।
তাঁর শেষ বড় কাজ বিক্রমপুরের ইতিহাস-এর রচয়িতা যোগেন্দ্রনাথ গুপ্তর ( ১৮৮২-১৯৬৪) জীবনীগ্রন্থ 'পথচারী ঐতিহাসিক যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত' (সম্পর্ক, ২০১৮)। বিশিষ্ট ইতিহাসকার যোগেন্দ্রনাথের দৌহিত্রী হিসেবেই শুধু নয়, উত্তরকালের ইতিহাসকার হিসেবে এক বড় কাজ করে গেছেন তিনি যোগেন্দ্রনাথের জীবন ও কাজের বিশ্লেষণ আর তার সঙ্গে তাঁর বিস্তৃত গ্রন্থপঞ্জি রচনা করে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours