মেদিনীপুরের এক দামাল কিশোর কী করে যেন জড়িয়ে গিয়েছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে। তবে এই নেশা একবার যার রক্তে ঢোকে, তার কাছে সাধনার বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। ক্ষুদিরামেরও তাই হয়েছিল। কিশোর বয়সের নানা ঘটনা পেরিয়ে এল বড়ো কাজ। অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে হবে। এই কাজের জন্য প্রথমে অবশ্য বাছা হয়েছিল প্রফুল্ল চাকী এবং সুশীল সেনকে। শেষমুহূর্তে বিশেষ কারণে সুশীল সেন যেতে পারেননি। তার জায়গায় দলে ঢোকেন ক্ষুদিরাম। ভয়? সেই শব্দটি তাঁর অভিধানে কোনদিনও ছিল না। শুধু পরিকল্পনাটা যাতে ঠিকঠাকভাবে হয়, সেই দিকেই ছিল নজর।
তবে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হিসেবে উঠে এসেছিলেন একজন পিওন, ধর্মশালার দপ্তরী এবং একজন এক্কাচালক। দুজন বাঙালি যুবক যে ধর্মশালায় উঠেছে, আর কিশোরীবাবু যে তাঁদের চেনেন এই ব্যাপারটায় শিলমোহর দেন তিনি। তবে চিহ্নিতকরণের কাজটি করতে পারেননি। সেটি করেছিল এক্কাচালক। এইভাবেই এগোতে থাকে বিচারপর্ব। একজনের বিচার তো আগেই হয়ে গেছে; আরেকজনের যে কী হবে সেটা জানতে বাকি ছিল না কারোর। ক্ষুদিরামের ফাঁসির আদেশ শুনে গোটা বাংলা ফেটে পড়েছিল। রাস্তায় নেমে পড়েছিল মানুষ। এমন ঘটনা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি কেউ।
আর ক্ষুদিরাম? তাঁকে যতই লোকে দেখে, অবাক হয়ে যায়। মৃত্যু সামনে দাঁড়িয়ে, অথচ তিনি গান গাইছেন স্বাধীনতার। বলে যাচ্ছেন, যদি একবার সুযোগ পাই, বাংলার ছেলেদের বোমা বাঁধানো শিখিয়ে যাব। একটা নয়, হাজার হাজার ক্ষুদিরাম তৈরি হবে এবার। আইনজীবী সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী বারবার করে বলছেন, রংপুর থেকে উকিলরা তোমাকে বাঁচাতে আসছে; আর তুমি তোমার কৃতকর্ম স্বীকার করে নিচ্ছ? অকপট ক্ষুদিরাম, ‘স্বীকার না করার কী আছে?’ গায়ে তখনও রক্ত ফুটছে। ব্রিটিশ পুলিশরাও অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সদ্য আঠেরো পেরনো ছেলেটির দিকে…
১১ আগস্টের মঞ্চ প্রস্তুতই ছিল। বীরদর্পে এগিয়ে গেলেন ক্ষুদিরাম। চারপাশের মানুষদের যেন কটাক্ষ ছুঁড়ে দিল তরুণটি। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে জল্লাদ দড়ি পরাতে যাবে, এমন সময় ক্ষুদিরাম জল্লাদকে প্রশ্ন করে বসল। ‘আচ্ছা, ফাঁসির দড়িতে মোম দেওয়া হয় কেন?’ জল্লাদ থ! মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে এমন আচরণ ক্ষুদিরামই করতে পারেন। গলায় পরানো হল কাপড়। ফাঁস আঁটল মোম-লাগা দড়ির। ভোর ঠিক ছটা। রুমাল উড়ল। তারপর...
তথ্যসূত্র- ‘মূল নথি থেকে ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকী’/ দে’জ পাবলিশিং
Post A Comment:
0 comments so far,add yours