অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা করোনাইভাইরাসের যে প্রতিষেধকটি তৈরি করছেন, তা প্রাথমিক ভাবে সফল বলে জানা গিয়েছে। সারা দেশ জুড়ে গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা, কিন্তু সরকার এখনও তা মানছেনা। করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারে চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও গবেষকরা রাতদিন এক করে ফেলছেন। আমাদের দেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও গবেষকরাও পিছিয়ে নেই। ভারতের তৈরি কো-ভ্যাকসিন এর পরীক্ষা মূলক ট্রায়াল শুরু হয়ে গেছে।
বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়েছে বহুদিন আগেই। মৃতের সংখ্যাও ছ'লক্ষ পেরিয়ে গিয়েছে। ভারতেও সংক্রমিতের সংখ্যা প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা, যদিও সরকার এখনও তা মানতে নারাজ। হাইড্রোক্সি-ক্লোরোকুইন, রেমডেসিভির কো-ভ্যাকসিন সহ একাধিক ওষুধের প্রয়োগ শুরু হয়েছে। তাতে সাড়াও মিলছে বলে চিকিৎসক-বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি। কিন্তু প্রতিষেধক বা টিকা ছাড়া এই ভাইরাসের সংক্রমণ থামানো সম্ভব নয় বলে প্রথম থেকেই বলে আসছেন বিজ্ঞানী গবেষকরা। তাই করোনার টিকা আবিষ্কারে কার্যত রাতদিন এক করে ফেলছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও গবেষকরা। সেই চেষ্টাতেই আরও এক ধাপ অগ্রগতি।
বিশেষ অংশ :
◆হাইড্রোক্সি-ক্লোরোকুইন, রেমডেসিভির কো-ভ্যাকসিন সহ একাধিক ওষুধের প্রয়োগ শুরু হয়েছে।
◆শরীরে করোনা প্রতিরোধকারী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে এবং উৎপন্ন হয়েছে শ্বেত রক্তকণিকা যা করোনা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে।
◆এই ভ্যাকসিন শরীরে ঢোকার পর ৭০% মানুষের প্রবল জ্বর ও মাথাব্যথা দেখা দিয়েছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা করোনাইভাইরাসের যে প্রতিষেধক তৈরি করছেন, তা প্রাথমিক ভাবে সফল বলে জানা গিয়েছে। এটির প্রয়োগে মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ছে বলেই প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় ১০৭৭ জনের শরীরে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছিল। এবং পরীক্ষার পর দেখা গিয়েছে, তাঁদের শরীরে কোভিড ১৯ প্রতিরোধকারী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে এবং উৎপন্ন হয়েছে শ্বেত রক্তকণিকা যা করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে।
এই ভ্যাকসিনটির নাম ChAdOx1 nCoV-19। বিজ্ঞানীরা দিনরাত এক করে এই ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করছেন। শিম্পাঞ্জির শরীরে সাধারণ সর্দি-জ্বর-ঠান্ডা লাগার ভাইরাস থেকেই এই ভ্যাকসিন তৈরি করা হচ্ছে। এটিকে প্রয়োজনের ভিত্তিতে বিরাট আকারে পরিবর্তন করা হয়েছে। এটি মানবদেহে কোনও সংক্রমণ ছড়াবে না। এবং এটি দেখতে অনেকটা করোনাভাইরাসের মতোই। এটি মানবশরীরে করোনাভাইরাসের প্রোটিন স্পাইকের মতো করেই যাতে কাজ করে সে কারণে এটির রূপ কোভিড ১৯-এর মতো দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ, এটি সহজেই শরীরে রোগ প্রতিরোধ তৈরি করতে সাহায্য করবে।
এই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এই ভ্যাকসিন শরীরে ঢোকার পর ৭০ শতাংশ মানুষের প্রবল জ্বর ও মাথাব্যথার দেখা দিয়েছে। তবে বিজ্ঞানীদের দাবি, এটি সহজেই প্যারাসিটামল দিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। অক্সফোর্ডের প্রফেসর সারা গিবার্টের কথায়, 'কোভিড ১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে এটিই আমাদের ভ্যাকসিন ঘোষণা করার আগে এখনও অনেকটাই কাজ বাকি। তবে এই প্রাথমিক সাফল্য খুবই আশাপ্রদ।'
যদিও এই ফলাফল একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, এবং এখুনই এটিকে প্রমাণিত সাফল্য বলা যাবে না। তবে এই পরীক্ষার ফল করোনার যুদ্ধে আশার আলো বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। আরও বড় ট্রায়ালের অপেক্ষায় রয়েছেন গবেষকেরা। সেটি প্রমাণিত হলেই ভ্যাকসিনের অনেকটা কাছে পৌঁছনো যাবে বলে মনে করছেন তাঁরা। ব্রিটেন থেকে ইতোমধ্যেই এই ভ্যাকসিন ১০০ মিলিয়ন অর্ডার করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, অন্তত ১৪০টি টিকা আবিষ্কারের প্রকল্প চলছে সারা বিশ্বে। তার মধ্যে অন্তত ১৩টি টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রথম সারিতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকা ইতোমধ্যেই তৃতীয় ধাপে মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নালের এডিটর রিচার্ড হরটন এ নিয়ে ট্যুইট করেছেন সোমবার। লিখেছেন এই ট্রায়াল একেবারেই সফল এবং অনেকটা আশার আলো দেখাচ্ছে করোনা যুদ্ধে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours