বলিউডের ‘হি-ম্যান’ ধর্মেন্দ্রকে চেনেন সকলেই। তাঁর ব্যক্তিত্ব মন জয় করে নিয়েছিল সবার, মহিলা মহলে তাঁকে নিয়ে চলত বিশেষ চর্চা। কিন্ত ধর্মেন্দ্র বলিউডে এলেন কী ভাবে জানেন? নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কতটা কষ্ট ও পরিশ্রম করতে হয়েছিল, সেই কাহিনী সম্পর্কে জেনে নিন।
ধর্মেন্দ্র জন্মেছিলেন পঞ্জাবের লুধিয়ানা জেলার নাসরালি গ্রামে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন শিক্ষক, স্বাভাবিক ভাবেই তিনি চাইতেন ধর্মেন্দ্র যেন পড়াশোনায় মনোযোগী হন। কিন্ত ছোটোবেলা থেকেই ছিল অভিনয়ের ঝোঁক, দিলীপ কুমার ও মতিলালের অভিনয় দেখেই তিনি অনুপ্রাণিত হন, সিদ্ধান্ত নেন পড়াশোনা ছেড়ে অভিনয়কেই তিনি পেশা হিসাবে বেছে নেবেন।
পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল না হওয়ায় ধর্মেন্দ্রকে রোজগারের জন্য মাঠে কাজ করতে হতো ছোটোবেলা থেকেই। কবাডি ও হকি খেলতে ভালোবাসতেন তিনি। তবে সবথেকে বেশি ভালবাসতেন অভিনয়কেই, তাই প্রতিনিয়ত মায়ের কাছে অভিনয়ের কথা বলতেন।
ধর্মেন্দ্র তাঁর মায়ের পরামর্শ মেনেই ১৯৫৮ সালে ফিল্মফেয়ারের ট্যালেন্ট হান্ট কম্পিটিশনে অংশগ্রহণের জন্য চিঠি পাঠান এবং নির্বাচিতও হন প্রতিযোগী হিসাবে। নিজের অভিনয়ের প্রতিভাকে প্রমাণ করে তিনি এই প্রতিযোগিতা জেতেন এবং চিরকালের জন্য পাঞ্জাব ছেড়ে মুম্বই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
ফিল্মফেয়ারের প্রতিযোগিতার কথা মনে করে তিনি বলেন, “মেহবুব স্টুডিয়োয় প্রতিযোগিতার ফল বেরোনোর দিন চিন্তায় আমার গলা থেকে জলও নামছিল না। আমার সঙ্গে আরও অনেক প্রতিভাশালী অভিনেতা অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাঁরাও নিজের সেরাটা উজাড় করে দিয়েছিলেন। কে জিতবে কেউ জানতো না।”
তিনি বিমল রায় সম্পর্কে বলেন, “ফিল্মফেয়ারের প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন তিনি ও তাঁর অ্যাসিস্ট্যান্ট দেবু সেন। দেবুদা আমায় দেখে বলেন ‘হ্যায় বাত’। এর কিছুক্ষণ পরই তিনি এসে বলেন বিমলদা তোমায় ডাকছে। আমি ভীত ও চিন্তিত হয়ে ভিতরে যাই ওঁর সঙ্গে দেখা করতে।”
দেখা করতে গিয়ে ধর্মেন্দ্র দেখেন, বিমল রায় তাঁর স্ত্রীর রান্না করে পাঠানো মাছ-ভাত খাচ্ছিলেন, তিনি ধর্মেন্দ্রকেও খেতে বলেন তাঁর সঙ্গে। দিনের পর দিন ঠিক ভাবে খেতে না পাওয়া ধর্মেন্দ্র লজ্জা পেলেও খেতে বসেন তাঁর কথায়। তখনই গল্পের ছলে বিমল রায় জানান তিনি ধর্মেন্দ্রকে ‘বন্দিনী’ সিনেমার জন্য নিতে চান।
চোখে জল চলে আসে ধর্মেন্দ্রের, নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তিনি। বিমল রায়ের সঙ্গে গুরু দত্তেরও এই সিনেমায় সহ পরিচালক হিসাবে কাজ করার কথা ছিল, যদিও গুরু দত্ত পরবর্তী সময়ে এই সিনেমার পরিচালনা থেকে সরে দাঁড়ান।
‘বন্দিনী’ ধর্মেন্দ্রের অভিনীত প্রথম সিনেমা হলেও রিলিজ হওয়ার সময় তা ষষ্ঠ সিনেমা হয়ে দাঁড়ায়। বন্দিনীতে অভিনয় করার পর তিনি আবার বেকার হয়ে পড়েন। তাঁর কাছে অধিকাংশ দিনই খাওয়ার কোনও টাকা থাকতো না। না খেয়েই তিনি পরিচালকদের দরজায় ঘুরে বেড়াতেন ছোট কোনও রোলের আশায়।
বলিউডে তাঁর বন্ধুরা তাঁকে অনেক সাহায্য করেছিলেন তাঁর সংগ্রামের সময়ে, এই কথা স্বীকার করে তিনি বলেন,অভিনয়ের কোনও সুযোগ না পেয়ে তিনি একসময় পঞ্জাব ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সময় তাঁকে মনোজ কুমার আটকান এবং লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
একদিন তিনি এক পরিচালকের সঙ্গে ট্যাক্সি করে আসছিলেন, নামার সময় তিনি ধর্মেন্দ্রর ভাড়া দিতে অস্বীকার করেন। এদিকে ধর্মেন্দ্রর পকেটেও নেই ভাড়া দেওয়ার মতো টাকা! এই সময় শশী কাপুর এসে তাঁকে উদ্ধার করেন এবং তাঁকে খাওয়ানোর জন্য নিজের বাড়ি নিয়ে যান।
তিনি বরাবরই মনে করেছেন যে তাঁর চেহারা তাঁর ইতিবাচক দিকের সঙ্গে নেতিবাচক দিকও। এই চেহারাই তাঁর অভিনয়কে ঢেকে দিয়েছে চিরকাল। পরিচালকরা তাঁর অভিনয়ের থেকে বেশি তাঁর ‘ম্যাচো লুকস্’কেই পর্দায় বেশি গুরুত্ত্ব দিতে চেয়েছেন বলে মনে করেন তিনি।
১৯৬৬ সালে ‘ফুল ও পাথথর’ সিনেমার মাধ্যমে তিনি বলিউডের ‘অ্যাকশন হিরো’ রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। এরপর একে একে জীবন মৃত্যু, ইয়াদো কি বারাত, চারাস, চুপকে চুপকে, সীতা অউর গীতা, শোলে, দোস্ত, আজাদ, ডি বার্নিং ট্রেন ইত্যাদি সিনেমা করে বলিউডে পাকাপাকি ভাবে নিজের জায়গা করে নেন।
সিনেমায় সফল হলেও ব্যক্তিগত জীবনে বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়েনি। ১৯ বছর বয়সে তিনি বিয়ে করেন প্রকাশ কউরকে, তাঁর ছেলে সানি ও ববি দেওলের কথা সবাই জানলেও তাঁর দুটি মেয়েও আছে ভিজেতা ও অজিতা নামে। বিবাহিত হলেও তিনি প্রেমে পড়েন ড্রিমগার্ল হেমা মালিনীর।
হেমা মালিনীকে বিয়ে করার জন্য তিনি মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি কিন্তু আজও তাঁর প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দেননি। হেমা মালিনী ও তাঁর দুই মেয়ে এশা ও আহানা দেওল। তিনি নিজের ছয় সন্তানের প্রতিই দায়িত্ব পালন করেছেন, আলাদা থাকার কারণে দায়িত্ব থেকে সরেননি।
২০০৪সালে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির তরফ থেকে রাজস্থানের বিকানেরে ভোটে দাঁড়ান এবং সাংসদ নির্বাচিত হন। তাঁর নিজস্ব প্রোডাকশন হাউসও রয়েছে, আপনে, ইয়ামলা পাগলা দিওয়ানা-র মত সিনেমা তাঁর প্রযোজনায় তৈরি।
পদ্মভূষণ বিজয়ী এই প্রবীণ অভিনেতা আজও তাঁর চেহারা ও অভিনয়ে হার মানাতে পারেন বলিউডের বড় বড় তারকাদের। বয়স হলেও তিনি অভিনয় থেকে সম্পূর্ণ ভাবে সরে আসেননি। তাঁর ইচ্ছা, ভাল চরিত্র পেলে তিনি জীবনের শেষদিন অবধি অভিনয় চালিয়ে যাবেন।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours