শুরু হয়ে গেল ভারতীয় রেলের বেসরকারীকরণ প্রক্রিয়া। সব ঠিকঠাক এগোলে তিন বছর পর থেকে দেশে চালু হয়ে যাবে এই বেসরকারি ট্রেনগুলি। সেই উদ্দেশ্যে ১৫১টি মেল বা এক্সপ্রেস ট্রেন চালানোর দায়িত্ব বেসরকারি হাতে তুলে দিতে ‘‌রিকোয়েস্ট ফর কোয়ালিফিকেশন’‌ আহ্বান করা হয়েছে। সহজ কথায়, শুরু হয়ে গেল উপযুক্ত বেসরকারি সংস্থাগুলির খোঁজ। বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের এপ্রিলে ১০৯ জোড়া রুটে বেসরকারি ট্রেন পরিষেবা চালু হয়ে যাবে। এই প্রথম বেসরকারি ট্রেন চালু হতে চলেছে দেশে। প্রথমবারেই এত ট্রেনকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হতেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘‌গরিব মানুষের একমাত্র জীবনরেখা রেল, সেটাও কেড়ে নিতে চাইছে সরকার। যা কেড়ে নেওয়ার, নিন। কিন্তু, মনে রাখবেন, দেশের মানুষ একদিন এর যোগ্য জবাব দেবেন।’‌ 
রেলের তরফে বলা হয়েছে, দেশে মোট যত ট্রেন চলে তার ৫ শতাংশের বেসরকারীকরণ হচ্ছে। ট্রেন পরিষেবায় আরও উন্নত প্রযুক্তি আনার জন্যই বেসরকারীকরণের পথে এই পদক্ষেপ, এই দাবি করে রেলবোর্ডের চেয়ারম্যান ভি কে যাদব বলেছেন, এর ফলে রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কমবে, যাতায়াতের সময় বাঁচবে, নতুন কর্মসংস্থান হবে, বাড়তি সুরক্ষা এবং বিশ্বমানের যাত্রার অভিজ্ঞতা সুনিশ্চিত হবে। এর মাধ্যমে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেসরকারি বিনিয়োগ হবে রেলে। ৩৫ বছর ট্রেনগুলি চালাতে পারবে ওই বেসরকারি সংস্থা। ট্রেনগুলোর ভাড়া ঠিক হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ভিত্তিতে, এবং তা ঠিক করবে বেসরকারি সংস্থা। এগুলির কোচ তৈরি হবে দেশে। কোচগুলি এমন হবে যাতে এখনকার ৪,০০০ কিমি–র পরিবর্তে ৪০,০০০ কিমি অবধি সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে হবে না। অর্থাৎ মাসে দু–একবারের বেশি সেই কাজ করার প্রয়োজন হবে না। গতি হবে ঘণ্টায় ১৬০ কিমি। প্রতিটি ট্রেনে থাকবে ১৬টি কামরা। বেসরকারি সংস্থাকে কোচগুলো কিনতে হবে, এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজও তাদেরই করতে হবে। রেলের পরিকাঠামো ব্যবহার করার খরচ ছাড়াও সংস্থাগুলিকে ভারতীয় রেলকে লাভের ভাগ দিতে হবে।   
যেসব রুটে বেসরকারি ট্রেন চালানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলির মধ্যে আছে হাওড়া–‌‌রাঁচি, হাওড়া–‌‌পুণে, হাওড়া–‌চেন্নাই, হাওড়া–‌‌পুরী, হাওড়া–‌‌নিউ বঙ্গাইগাঁও, হাওড়া–‌আনন্দ বিহার, হাওড়া–‌‌বারাণসী, হাওড়া–‌‌ভাগলপুর ও শিয়ালদা–‌‌গুয়াহাটি। ট্রেনগুলি চলবে দেশের ১২টি ক্লাস্টারে। তালিকায় রয়েছে বেঙ্গালুরু, চণ্ডীগড়, জয়পুর, দিল্লি ও দিল্লি–১, মুম্বই ও মুম্বই–১, পাটনা, প্রয়াগরাজ, সেকেন্দ্রাবাদ, হাওড়া ও চেন্নাই। এই সব ট্রেনের একটি প্রথমিক টাইম টেবিলও রেলের তরফে ‘‌রিকোয়েস্ট ফর কোয়ালিফিকেশন’–এ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে রেল সূত্রে বলা হয়েছে, সেগুলি নিছকই পরীক্ষামূলকভাবে উল্লেখিত হয়েছে। কারণ, কখন কতগুলি ট্রেন চালু হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করবে পুরো বিষয়টি। যেমন, সব চেয়ে বড় প্রশ্ন হল কতগুলো বেসরকারি সংস্থা এই দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসবে। এখন দেশের অর্থনীতির যা অবস্থা, তাতে খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার কারণ দেখছে না ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ।‌ 
দেশের ১০৯টি রুটে ১৫১টি ট্রেন বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়ে গত ডিসেম্বরেই নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল মোদি সরকার। বুধবার রেলের তরফে ওই ট্রেনগুলি চালানোর জন্য কোন কোন বেসরকারি সংস্থাগুলি আগ্রহী, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এরপর বৃহস্পতিবার রেলের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করেন রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান ভি কে যাদব। তিনি জানিয়েছেন, ২,৮০০ মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেন চালায় রেল। এর মাত্র ৫ শতাংশ ট্রেন বেসরকারি সংস্থা চালাবে।  ট্রেনের ভাড়া নিয়ে সাধারণ মানুষকে অসুবিধার মধ্যে পড়তে হবে না বলে দাবি করেছেন রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান। রেলের তরফে বলা হয়েছে, রেলের রেকগুলিকে ভারতেই তৈরি করতে হবে এবং বেসরকারি সংস্থাকে মূলধন জোগানের দায়িত্ব নিতে হবে। তবে, ট্রেনের সুরক্ষা কর্মী ও চালকরা হবেন ভারতীয় রেলের। ‌‌
এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। টুইটে তাঁর বক্তব্য, রেল মন্ত্রক ট্রেন চালানোর জন্য আগ্রহী বেসরকারি সংস্থার খোঁজ শুরু করেছে। রেলের ঘোষণা অনুযায়ী ১০৯টি রুটের ট্রেন চালাবে বেসরকারি সংস্থা, বেসরকারি সংস্থা ৩৫ বছর ধরে ট্রেনের ভাড়া ঠিক করবে!‌ অথচ, বিষয়টি নিয়ে কোনও আলোচনা হল না, বিতর্ক হল না। কোভিডকে শিখণ্ডী বানিয়ে বিরোধী মতামতকে উড়িয়ে দিয়ে রেলকে বেচে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার, অভিযোগ তৃণমূল সাংসদের।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours