পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলায় সম্প্রতি খোঁজ মিলেছে এক “চেন হত্যাকারীর”। কামারুজ্জামান বিদ্যুতের মিটার দেখার নাম করে দুপুর বা বিকেলের দিকে হাজির হন এবং বাড়িতে একা থাকার সুযোগ নিয়ে আচমকাই গলায় সাইকেলের চেন পেচিয়ে ধরেন। কালনা মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে এই একই পদ্ধতিতে খুনের শিকার হয়েছেন বহু মহিলা। এর মধ্যে প্রাণে বেঁচেছেন বেশকিছু জন। অভিযুক্ত চেন খুনীকে কালনা আদালত মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন। পূর্ব বর্ধমান ও পার্শ্ববর্তী হুগলি জেলায় প্রায় পাঁচ জন মহিলাকে যৌন নিপীড়ন ও হত্যার অভিযোগ ওঠে।এছাড়া এই অপরাধীর বিরুদ্ধে সর্বমোট ১৫ টি খুন বা খুনের চেষ্টার মামলা করা হয়েছে। শেষ ঘটনাটি ঘটেছিল ৩০ শে মে ২০১৯। এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে কালনা আদালতের বিচারক তপন কুমার মণ্ডল তাকে ফাঁসির রায় শুনিয়েছিলেন। আইনজীবীরা দাবি করেন বালিকার ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়ে খুনের এই মামলায় ‘পকসো’ ধারা অনুসরণ করা হয়েছিল।এই ধরনের মামলার ক্ষেত্রে সাধারণত ৩০ দিনের মধ্যে চার্জশিট জমা এবং এক বছরের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে হয়। ক্রমাগত এই ধরনের ঘটনার পর গত বছর জুন মাসে অভিযুক্তকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়।
২০১৯ এর ১ এপ্রিল হাট কালনার পঞ্চায়েতের রং পাড়ার এক বধু আক্রান্ত হয়েছিলেন ।অভিযুক্ত ধরা পড়ার পরে টিআই প্যারেডে তাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই বধূ বলেন “সেদিনের ঘটনায় আজও শিউরে উঠি। লোকটা বাড়িতে মিটার দেখার নাম করে ঢুকে গলায় চেন লাগিয়ে খুনের চেষ্টা করেছিল। অনেক কষ্টে প্রাণে বেঁচেছি।” কালনাতে বছর চুয়াত্তরের এক মহিলাও আক্রান্ত হয়েছিলেন এই চেন খুনির হাতে। প্রাণে বাঁচলেও ঘটনার পর দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন তিনি। কালনায় মল্লিকপাড়া একটি ভাড়া বাড়িতে গলার চেন পেচিয়ে খুন করা হয় এক মহিলাকে। পুলিশের দাবি তার ওপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছিল। ২০১৩ সালে মন্তেশ্বর এ গলায় চেন পেচিয়ে খুন করা হয় এক বৃদ্ধাকে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায় ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি থেকে মূল্যবান বেশকিছু জিনিস নিয়ে পালালেও চুরির উদ্দেশ্য অপরাধী ছিল না । জেলা পুলিশের খবর মহিলাদের হত্যা করাই তার প্রধান লক্ষ্য। পুলিশ জানিয়েছে যে লোকটি বিবাহিত এবং তার তিনটি ছেলে মেয়ে রয়েছে। মহিলাদের খুন করে যৌনাঙ্গে ধারালো অস্ত্র ঢোকানোর অভিযোগ রয়েছে তার ওপর। ২০১৯ এর ৪ এপ্রিল কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মেমারি থানা এলাকায় দুজন মহিলা কে পর পর হত্যা করেছে অপরাধী। এই চেন খুনি আটটি মামলায় আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে।সরকার পক্ষের আইনজীবী নিযুক্ত হয়েছেন সৌমজিৎ রাহা। তিনি বলেন লকডাউন না হলে আরো দুটি মামলায় শুনানি হয়ে যেত ।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours