নিজস্ব প্রতিবেদন: পিছোতে পারে জ়ি সেভেন (G7 Summit) সম্মেলন। এয়ার ফোর্স ওয়ান-এর একটি অনুষ্ঠানে এসে এমনটাই জানালেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ বারে জ়ি সেভেন সম্মেলনের উদ্যোক্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই। জুনের ১০ থেকে ১২ তারিখে এই সম্মেলন হওয়ার কথা। সেপ্টেম্বর নাগাদ জ়ি সেভেন সম্মেলন করার ভাবনা চিন্তা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এক লক্ষের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। আক্রান্ত ১৮ লক্ষ মানুষ। প্রতি ১০ লক্ষ জনসংখ্যার ৭৯০ জন আক্রান্ত এবং মৃত্যু ৪৭ জনের। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে জি় সেভেন বৈঠক হওয়া কার্যত অনিশ্চিত ছিল। সূত্রে খবর, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মর্কেল ওই বৈঠকে যোগ দিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এরপরই বৈঠক পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
জি সেভেন নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য:
এ দিন তিনি জানান, বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতে জ়ি সেভেন অন্তর্ভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে বৈঠক যথাপোযুক্ত বলে মনে করি না। এই বৈঠককে আরও তাত্পর্যপূর্ণ করে তুলতে বেশ কয়েকটি দেশকে আমন্ত্রিত করা প্রয়োজন। ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও রাশিয়াকে আমন্ত্রণ জানানোর ইচ্ছাপ্রকাশ জানান ট্রাম্প।
জুনে বৈঠক ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে হওয়ার কথা ছিল। মনে করা হচ্ছে, রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সভার আগে বা পরে এই বৈঠক হতে পারে। রাশিয়াকে ট্রাম্পের আমন্ত্রণ জানানোর ইচ্ছা প্রকাশ করায় জোর কূটনৈতিক চর্চা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
রাশিয়াকে বহিষ্কার:
২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের জন্য জি় ৮ সম্মেলন থেকে বহিষ্কার করা হয় রাশিয়াকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল ছিল অপ্রত্যাশিত এবং নজিরবিহীন। এরপর রাশিয়ার সঙ্গে এক টেবিলে বসে আলোচনা করা কঠিন ছিল গণতান্ত্রিক দেশগুলির কাছে। রাশিয়াকে বহিষ্কার করে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছিল অন্যান্য দেশগুলি।
জি় ৮ রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তি:
১৯৯৭ সালে প্রথম রাশিয়া জ়ি ৮ সম্মেলনে অন্তর্ভুক্তি হয়। কিন্তু ১৯৯৯ সালে ভ্লাদিমির পুতিন ক্ষমতায় আসার পরই অঙ্ক পাল্টাতে শুরু করে। পুতিনের গোঁয়ারতুমি বরাবরই চাপে রেখেছে আমেরিকা। অন্যদিকে চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক স্তরে ভাল সম্পর্ক রেখে এসেছে মস্কো। রাশিয়াকে বহিষ্কার করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে রাখতে কূটনৈতিক ভাবে চিন বড় সুবিধা পেয়ে যায় বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
ট্রাম্পের রুশ প্রীতি:
কিন্তু ফের পাশা ওল্টায় মার্কিন মসনদে ডোনাল্ড ট্রাম্প বসায়। ট্রাম্পের ক্ষমতার আসার পিছনে রাশিয়ার হাত ছিল বলে বিতর্ক তৈরি হয়। এরজন্য ইমপিচমেন্ট হওয়ার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, জি় সেভেন গ্রুপে রাশিয়াকে ফিরিয়ে আনা জরুরি। রাশিয়া এই গ্রুপের সম্পদ। এতে উপকৃত হবে গোটা বিশ্ব।
রাশিয়াকে আমন্ত্রণে ট্রাম্প কার্ড:
হোয়াইট হাউসের সংযোগকারী ডিরেক্টর অ্যালিসা ফারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, এই বৈঠক বর্ধিত করা মানে চিনের সঙ্গে বোঝাপড়া পথকে আরও প্রশস্ত করা। অর্থাত্ ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া এবং রাশিয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিনকে সরাসারি চাপে ফেলার চেষ্টা করতে চাইছে হোয়াইট হাউজ।
করোনা আবহে চিন এবং আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্ক কার্যত তলানিতে। তার আগের থেকে শুল্কযুদ্ধে পরস্পর বাকবিতণ্ডায় জড়িয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন সরাসরি বিশ্বের এই পরিস্থিতির জন্য চিনকে দায়ী করতে শুরু করেছে। তবে, চিনকে চাপে ফেলতে না চিনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক ঝালিয়ে নিতে রাশিয়াকে কীভাবে হোয়াইট হাউজ ব্যবহার করতে চাইছে, এখনও পর্যন্ত সন্দিহান কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
জ়ি সেভেনে ভারত:
ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত জি সেভেন সম্মেলনে অতিথি হিসাবে আমন্ত্রিত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ডোনাল্ড ট্রাম্প-সহ একাধিক রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠক হয় তাঁর। সে সময় কাশ্মীর ইস্যু এবং পুলওয়ামা ঘটনা নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে। কাশ্মীর ৩৭০ প্রত্যাহার নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের যে ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছিল, তা ফিরিয়ে আনতে জি় সেভেন ছিল নরেন্দ্র মোদীর কাছে সুবর্ণ সুযোগ। খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে মধ্যস্থতা প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে, নরেন্দ্র মোদী বিশ্বের কাছে এই বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছিলেন, কাশ্মীর ভারতে অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং ৩৭০ প্রত্যাহার অভ্যন্তরীণ পদক্ষেপ।
এ বারে প্রকৃত সীমান্ত রেখায় ভারত-চিনের দ্বৈরথ নতুন মাত্রা দিয়েছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্কে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানোর চেষ্টায় সাউথ ব্লক। তবে, এবারে জি সেভেন সম্মেলনে ভারত আমন্ত্রিত হলে চিন কিছুটা চাপে থাকে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া করোনা পরিস্থিতে মুষড়ে পড়া অর্থনীতিকে ফিরিয়ে আনতে জি় সেভেন বৈঠক বড় প্ল্যাটফর্ম ভারতের কাছে।
উল্লেখ্য, বিশ্বের জিডিপির মোট ৩০ শতাংশ বহন করে এই সম্মলেনর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলি। সেগুলি হল, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (২০২০ উদ্যোক্তা) এবং ইউরোপিয় ইউনিয়ন (অতিথি)।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours