সোমবার দিনভর মোট ৫ টি আলাদা অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এদিন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন হীতেন্দ্র নাথ বর্মন, জনার্দন বর্মন, সম্পদ রায়, কমল চন্দ্র বর্মন ও দেবব্রত রায়। আজ মোট ৫ জন নতুন করে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এখনও পর্যন্ত মোট ৬৩ লক্ষ! নিশীথ প্রামাণিকের 'আপ্ত সহায়ক' পরিমলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ
অভিযোগের তালিকা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে নিশীথের আপ্ত সহায়ক পরিচয় দেওয়া কুখ্যাত আসামী পরিমল রায়ের বিরুদ্ধে। এর আগে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর গুলি চালানো, বিস্ফোরক-সহ আরও বিভিন্ন অভিযোগের মামলা রয়েছে। বিধানসভা ভোটের টিকিট ও চাকরি দেওয়ার টোপ দিয়ে বিজেপি নেতাদের কাছ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা হাতানোর অভিযোগ উঠেছিল পরিমলের বিরুদ্ধে। এবার ওই তালিকায় নতুন সংযোজন হল কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নেওয়া-সহ আরও একগুচ্ছ অভিযোগ।
অমিত শাহর প্রাক্তন ডেপুটি নিশীথ প্রামাণিক। অভিযোগ, তার পিএ পরিচয় দিয়ে বিজেপির মণ্ডল সভাপতি বিশ্বনাথ শীলকে বিধানসভার টিকিট ও যুবক যুবতীদের চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রায় ৫৭ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল পরিমল রায়। এই বিপুল পরিমাণ টাকা অনলাইনে পেমেন্ট করেছিলেন বলে দাবি বিশ্বনাথ শীলের। কিন্তু বিধানসভার টিকিট বা কারোর চাকরি না হবার পর তিনি পরিমল রায়ের কাছে টাকা ফেরতের দাবি করেন। লাগাতার প্রতিশ্রুতির পর সেই টাকা ফেরত না পেয়ে গতকাল ময়নাগুড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বিশ্বনাথ শীল।
রবিবার রাতে টিভি নাইন বাংলায় সেই খবর সবার আগে প্রচারিত হয়। আর এরপর সেই খবর প্রকাশিত হতেই সোমবার দফায় দফায় ময়নাগুড়ি থানায় পরিমল রায়ের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণা সংক্রান্ত একের পর এক লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়।
সোমবার দিনভর মোট ৫ টি আলাদা অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এদিন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন হীতেন্দ্র নাথ বর্মন, জনার্দন বর্মন, সম্পদ রায়, কমল চন্দ্র বর্মন ও দেবব্রত রায়। আজ মোট ৫ জন নতুন করে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এবার সবাই কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা। আজ মোট আর্থিক প্রতারণার অভিযোগের পরিমাণ ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বেশি। অর্থাৎ দুদিন মিলিয়ে প্রায় ৭১ লক্ষ টাকা আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হল ময়নাগুড়ি থানায়।
মেখলিগঞ্জের উছল পুকুরি এলাকার বাসিন্দা হিতেন্দ্র নাথ বর্মন বলেন, “আমার মেয়েকে কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজে চাকরি দেওয়ার নাম করে ২ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে পরিমল রায়। আমরা তাঁকে নিশীথ প্রামাণিকের আপ্ত সহায়ক বলে জানতাম। মন্ত্রীর সাথে কর্মসূচিতে দেখেছি। তাই বিশ্বাস করে টাকা দিয়েছিলাম। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর চাকরি না হলে আমি টাকা ফেরত চাই। দিয়ে দেবে বলে দু বছর ধরে ঘোরাচ্ছে। আজ সংবাদ মাধ্যমে পরিমল রায়ের প্রতারণার খবর দেখলাম। তাই ময়নাগুড়ি থানায় ছুটে এসে অভিযোগ দায়ের করলাম।”
প্রতারিত হয়েছেন কমল চন্দ্র বর্মন। বিজেপি নেতা বিশ্বনাথ শীল বলেন, “মন্ত্রী থাকা কালীন নিশীথ প্রামাণিকের বাড়িতে অভিযুক্ত পরিমল রায় কে দেখেছেন।এমনকি খোদ মন্ত্রীর বাড়িতে পরিমলের সাথে মন্ত্রীর সাথে তার আত্মীয়ের চাকরির ব্যাপারে কথা বলেছিলেন। ওই সময় পরিমলকে মন্ত্রীর সাথেই দেখা যেতো। টাকা ফেরত দেবার জন্য ও আমার সামনেই নিশীথ প্রামানিককে ফোন করেছিল বলে দাবী তার।
পুলিশ সুপার উমেশ খাণ্ডবাহাল বলেন, “মঙ্গলবার নতুন করে ৫ টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আমরা মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছি। অপরদিকে পরিমল রায় পলাতক। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে।” তিনি আরও বলেন, “পরিমল রায় একজন কুখ্যাত অপরাধী। ২০১৮ সালে তিনি যখন কোচবিহার জেলায় SDPO পদে আসীন ছিলেন সেই সময় একটি অভিযান চলাকালীন পরিমল রায় পুলিশের উপর গুলি চালায়। ওই ঘটনায় তিনি নিজেও গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। ওই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত পরিমল রায়ের বিরুদ্ধে আজও মামলা চলছে।” পরিমল রায়ের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। অপরদিকে নিশীথ প্রামাণিক জানিয়েছেন, এই নামে তাঁর কোনও পিএ নেই।